পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৩৯

বলিলেন, ‘আমি যদি কুণ্ডল আর কবচ দিই তাহা হইলে আমাকে আপনার ‘এক পুরুষ ঘাতিনী’ শক্তি দিতে হইবে৷

 ইন্দ্র বলিলেন, ‘আচ্ছা তাহাই হউক। এই আমার ‘এক-পুরুষ-ঘাতিনী’ শক্তি তোমাকে দিতেছি, কিন্তু ইহার একটা নিয়ম আছে। যেখানে আর কোনো অস্ত্রেই কাজ হইবার নহে, কেবল সেই স্থলেই এ অস্ত্র ছুঁড়িলে নিশ্চয় মৃত্যু। যেখানে-সেখানে ছুঁড়িয়া বসিলে ইহা তোমারই গায়ে পড়িবে। এ অস্ত্রে এক জনের বেশি লোক মরে না। সেই একজন শত্রু যত বড় যোদ্ধাই হউক, তাহাকে মারিয়া আমার শক্তি আমার নিকটে চলিয়া আসিবে৷

 কর্ণ তাহাতেই রাজি হইয়া ইন্দ্রের নিকট হইতে শক্তি লইলেন, এবং নিজের কুণ্ডল আর কবচ তাঁহাকে খুলিয়া দিলেন৷

 ইন্দ্র কর্ণের কুণ্ডল আর কবচ লইয়া গিয়াছে, এ কথা শুনিয়া দুর্যোধনের দলের যেমন দুঃখ হইল, পাণ্ডবেরা তেমনই আনন্দ পাইলেন৷

 এই সময়ে পাণ্ডবেরা কাম্যক বন হইতে দ্বৈত বনে চলিয়া আসেন। ইহার কিছুদিন পরে একটি অতি আশ্চর্য ঘটনা হইয়াছিল৷

 কাঠে কাঠে ঘষিলে আগুন বাহির হয়। এই উপায়ে পূর্বকালের মুনি-ঋষিরা অনেক সময় আগুন জ্বালিতেন। যাহাদের গৃহে প্রত্যহ অগ্নির পূজা হইত, তাঁহাদের যখন-তখন আগুনে জ্বালিবার একটা ব্যবস্থা না রাখিলেই চলিত না। তাঁহাদের সকলেরই ‘অরণী’ নামক দুখানি কাঠ থাকিত। এই কাঠ দুখানি ঘষিয়া তাঁহারা আগুনে জ্বালিতেন৷

 ইহার মধ্যে হইয়াছিল কি—দ্বৈত বনের এক তপস্বী ব্রাহ্মণ একটা গাছে তাঁহার অরণীটি কুলাইয়া রাখিয়াছিলেন। একটা হরিণ আসিয়া সেই গাছে গা ঘষিতে আরম্ভ করে। ঘষিতে ঘষিতে ব্রাহ্মণের অরণীখানি কেমন করিয়া তাহার শিঙে আটকাইয়া যায়, তাহাতে হরিণও ভয় পাইয়া সেই অরণীসুদ্ধ বেগে পলায়ন করে৷

 তখন ব্রাহ্মণটি অতিশয় ব্যস্ত হইয়া পাণ্ডবদিগকে তাঁহার অরণী আনিয়া দিতে বলায়, পাঁচ ভাই মিলিয়া সেই হরিণের পিছু পিছু তাড়া করিলেন। কিন্তু তাহাকে তাঁহারা ধরিতে বা মারিতে তো পারিলেনই না, লাভের মধ্যে এই হইল, যে, পিপাসা আর পরিশ্রমে তাহাদের প্রাণ যায়-যায়। তখন তাঁহারা বিশ্রামের জন্য একটা গাছের তলায় বসিয়া নকুলকে জল আনিতে পাঠাইলেন৷

 নিকটেই একটি জলাশয় ছিল। নকুল তাহাতে নামিয়া জল খাইতে যাইতেছে, এমন সময় এক যক্ষ আকাশ হইতে তাঁহাকে বলিল, “বাছা নকুল। ও জল আগে আমি দখল করিয়াছি। আমার কথার উত্তর দিয়া, তবে জল খাও৷”

 নকুল যক্ষের কথা গ্রাহ্য না করিয়া জল তুলিয়া মুখে দিলেন। সে জল পান করিবামাত্র তাঁহার মৃত্যু হইল৷

 এদিকে যুধিষ্ঠির নকুলের বিলম্ব দেখিয়া, সহদেবকে বলিলেন, “নকুলের কেন এত বিল হইতেছে? তুমি শীঘ্র তাহার অনুসন্ধান কর৷”

 সহদেব নকুলকে খুঁজিতে খুঁজিতে সেই জলাশয়ে উপস্থিত হইয়া তাঁহার মৃতদেহ দেখিবামাত্র কাঁদিয়া অস্থির হইলেন, তারপর ভয়ানক পিপাসা হওয়াতে, তিনিও জলাশয়ে নামিয়া জল খাইতে গেলেন। তখন সেই যক্ষ তাঁহাকেও বাধা দিয়া বলিল, “আগে আমার কথার উত্তর