পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
ছেলেদের মহাভারত
২৪৫

 সভার লোকেরা কীচকের অনেক নিন্দা কবিতে লাগিল, কিন্তু রাজা তাহাকে কিছু বলিলেন না৷ কীচককে তিনি বড়ই ভয় করিতেন৷ সে ৩াঁহার সেনাপতি ছিল, তার জোরেই তিনি রাজা করিতেন৷ বাস্তবিক বিরাট কেবল নামেই সে দেশের রাজা ছিলেন, দেশ শাসন করিত কীচক৷

 দ্রৌপদীর কষ্ট দেখিয়া যুধিষ্ঠির বলিলেন, “সৈরিন্ধ্রী! ঘরে যাও তোমার গন্ধৰ্ব স্বামীরা সময় বুঝিয়া হয়তো ইহার বিচার করিবেন৷”

 এ কথায় দ্রৌপদী চোখের জল মুছিয়া বাড়ির ভিতর চলিয়া গেলেন৷ সেখানে সুদেষ্ণা তাঁহার নিকট সকল কথা শুনিয়া বলিলেন, “তুমি যদি বল তবে দুষ্টকে এখনই কাটিয়া ফেলি৷”

 দ্রৌপদী বলিলেন, “আমার যাঁহারা আছেন, তাঁহারাই তাহাকে বধ করিবেন৷”

 রাত্রিতে দ্রৌপদী চুপিচুপি ভীমের নিকট গিয়া উপস্থিত হইলেন৷ ভীম আগে হইতেই প্রস্তুত হইয়া আছো! এতক্ষণ যে কীচককে মারেন নাই, সে কেবল লোকে জানিতে পারার ভযে৷ নির্জন স্থানে তাহাকে পাইলে আর তিনি এক মুহুৰ্তও দেরি করিতেন না৷

 রাজবাড়িব মেয়েদেব সঙ্গীতের ঘরটি ঠিক এইরূপ নিরিবিলি স্থান ছিল৷ সে স্থানে দিনের বেলায মোগে,ব’ নাচ-গান করিত, রাত্রিতে কেহ সেখানে থাকিত না৷ কোনো কারণে সেদিন ভোব রাত্রে কীচকেব একেলা সেই খবে যাওয়ার দরকাব ছিল৷ ভীম তাহা জানিতে পারিয়া তাহার আগেই চুপিচুপি সেখানে গিয়া, চাদর মুড়ি দিযা শুইয়া রহিলেন৷

 অনেক বাত্রে কীচক সেখানে আসিয়াছে৷ অন্ধকারে ভীমকে দেখিয়া সে মনে করিল, বুঝি দ্রৌপদী সেখানে শুইয়া আছেন৷ তাই দুষ্ট তাঁহার সঙ্গে তামাশা আরম্ভ করিল৷ সে বলিল, “বাড়িব লোক বলে, আমার মতন সুন্দর মানুষ আর নাই৷”

 তাহাতে ভীম বলিলেন, “আর আমার এই হাতখানির মতো মোলায়েম হাতও আর কো—থা-ও নাই!”

 এই বলিয়াই তিনি সেই দুষ্টের চুলের মুঠি ধরিলেন। তারপর কি হইল বুঝিয়া লও৷ কীচকও যেমন-তেমন বীর ছিল না, সে খানিক্ষণ খুবই যুদ্ধ করিল৷ কিন্তু ভীমের কাছে তাহার বড়াই আব কতক্ষণ খাটিবে? সেই ‘মোলায়েম’ হাতের চড় ভালো মতে খাইয়া আর তাহার বেশি কথা কহিতে হইল না৷ তখন ভীম সেই দুষ্টকে ধরিয়া তাহার এমনি সাজা করিলেন যে, তাহার হাড়গোড় ভাঙ্গিয়া, হাত-পা আর মাথা পেটের ভিতর ঢুকিয়া, একতাল মাংস মাত্র অবশিষ্ট রহিল৷ আজও কেহ কাহাকেও নিতান্ত ভয়ানক সাজা দিলে, লোকে বলে, ‘কীচক বধ করিয়াছে৷’

 তারপর দ্রৌপদীকে ডাকিয়া কীচকের দশা দেখাইয়া ভীম চুপিচুপি নিজের ঘরে চলিয়া গেলেন। লোকে দ্রৌপদীর নিকট শুনিল যে, তাঁহার গন্ধৰ্ব স্বামিগণের হাতেই কীচকের সাজা হইয়াছে।


 এই ঘটনার সংবাদে কীচকের ভাইয়েরা সেখানে আসিয়া, কাঁদিতে কাঁদিতে তাহাকে শ্মশানে লইয়া চলিল৷ তাহারা তাহাকে লইয়া ঘরের বাহিরে আসিবার সময় দৌপদী সেখানে দাঁড়াইয়াছিলেন৷ তাঁহাকে দেখিবামাত্র দুষ্টেরা বলিল, “এই হতভাগীর জনাই তো আমাদের দাদার প্রাণ গেল৷ চল তাঁহার সঙ্গে ইহাকেও নিয়া পোড়াই৷”