পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৪৭

লইবার জন্য কৌরবদিগকে খ্যাপাইয়া তুলিলেন৷

 কৌরবদিগের মধ্যে দুর্যোধন, দুঃশাসন, কর্ণ প্রভৃতির মতো লোক থাকিতে কি আর অন্যায় কাজের জন্য তাঁহাদিগকে খ্যাপাইয়া তুলিতে বেশি সময় লাগে? সুশর্মা কথাটা পাড়িতে না পাড়িতেই স্থির হইল যে, তিনি তখনই বিরাটের গোয়ালাদিগকে তাড়াইয়া দিয়া তাঁহার গোরু চুরি করিতে যাইবেন, কৌরবেরা তাহার পরের দিনই দলবল সমেত গিয়া সেই সকার্যের সহায়তা করিবেন। এমন সুযোগ পাইয়া সুশমা আর একটুও সময় নষ্ট করিলেন না৷

 বিরাট সভায় বসিয়া আছে, এমন সময় এক গোয়ালা উদ্ধশ্বসে সেখানে আসিয়া সংবাদ দিল, “মহারাজ! ত্রিগর্ত দেশের লোকেরা আমাদিগকে পরাজয় করিয়া হাজার হাজার গোরু লইয়া গিয়াছে৷”

 যেই এ সংবাদ দেওয়া, অমনি রাজ্যময় হুলস্থূল পড়িয়া গেল। চারিদিকে কেবলই ‘সাজ, সাজ! ধর, ধর! মার, মার!’ শব্দ। সিপাহী, সৈন্য, রথ, হাতি, ঘোড়া, সব সাজিয়া প্রস্তুত হইল, নিশান উড়িতে লাগিল। মেঘের গর্জনের ন্যায় রণবাদ্য বাজিয়া উঠিল। তাহার সহিত অস্ত্রের ঝন্ ঝন্ মিশিয়া গেল৷

 যোদ্ধারা বর্ম আঁটিয়া অস্ত্র-শস্ত্র লইয়া প্রস্তুত। নিজে বিরাট সাজিয়াছেন, তাঁহার ভাই শতানিক সাজিয়াছেন, জ্যেষ্ঠ পুত্র শঙখও সাজিয়াছে। আর আর যোদ্ধারা তো কথাই নাই। যুধিষ্ঠির, ভীম, নকুল আর সহদেবকেও রাজা যুদ্ধের পোশাক পরাইয়া উত্তম-উত্তম অস্ত্র দিয়া চমৎকার রথে চড়াইয়া সঙ্গে লইয়াছেন৷

 বেলা প্রায় শেষ হইয়াছে, এমন সময় দুই দলের যুদ্ধ আরম্ভ হইল। অন্ধকারের সহিত সেই যুদ্ধ আরো ঘনাইয়া আসিল৷

 দুঃখের বিষয়, আয়োজনের ঘটা যেমন হইয়াছিল, আসল যুদ্ধটা তেমন করিয়া হইতে পারে নাই। প্রথমে কয়েক ঘণ্টা খুবই যুদ্ধ হইয়াছিল বটে, কিন্তু তাহার পরেই দেখা গেল যে, সুশর্মা বিরাটের সারথিকে মারিয়া তাঁহাকে ধরিয়া লইয়া যাইতেছেন। তখন বিরাটের সৈন্যগণ রণস্থল ছাড়িয়া, যে যেদিকে পারিল পলায়ন করিল৷

 এদিকে যুধিষ্ঠির ভীমকে বলিতেছে, “ভীম, দেখিতেছ কি? বিরাটকে তো লইয়া গেল! শীঘ্র তাঁহাকে ছাড়াইয়া আন! এতদিন যাঁহার আশ্রয়ে সুখে বাস করিলাম, এসময়ে তাঁহার উপকার করা উচিত৷”

 ভীম বলিলেন, “হাঁ নিশ্চয়। এই দেখুন না, আমি এই গাছ দিয়া—”

 গাছের নাম শুনিয়া যুধিষ্ঠির ব্যস্তভাবে বলিলেন, “না না! গাছ লইয়া নয়। তাহা হইলেই তোমাকে চিনিয়া ফেলিবে। তুমি সাধারণ লোকের মতো অস্ত্র-শস্ত্র লইয়া যাও। নকুল তোমার সঙ্গে যাউক৷”

 ভীম তাহতেই রাজি হইয়া চলিয়া গেলেন। হাতে গাছ না থাকিলেই কি ভীম তো! বিরাটকে তিনি ডাকিয়া বলিলেন, “ভয় নাই!” তাহা শুনিয়া সুশর্মা পিছনের দিকে চাহিয়া দেখিলেন, একটা কি অদ্ভুত মানুষ ঝড়ের মতন ছুটিয়া আসিতেছে। দেখিতে দেখিতে সেই অদ্ভুত মানুষের গদার ঘায় তাহার হাতি, ঘোড়া, সিপাহী প্রায় শেষ করিয়া ফেলিল৷

 সুশর্মা আর উপায় না দেখিয়া ভীমের সহিত যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। কিন্তু যুদ্ধ আর