পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

না।’ শেষে ভীষ্ম ভালমত হিসাব করিয়া বলিলেন, ‘আমি দেখিতেছি, পাণ্ডবদের তের বৎসর পূর্ণ হইয়া পাঁচ ছয় দিন বেশী হইয়াছে। সুতরাং তাঁহাদের যাহা করার কথা ছিল, তাহা ভালরূপেই করিয়াছেন, তাহাতে ভুল নাই।’

 তারপর ভীষ্মের কথায় সৈন্যদিগকে চারিভাগ করিয়া এক ভাগের সহিত দুর্যোধন নিজেকে বাঁচাইবার জন্য হস্তিনায় যাত্রা করিলেন। এক ভাগ গরু লইয়া চলিল আর দুই ভাগ লইয়া ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, কৃপ প্রভৃতি অর্জুনকে আটকাইতে প্রস্তুত হইলেন৷

 এমন সময় অর্জুনের দুটি বাণ আসিয়া দ্রোণের পায়ের কাছে পড়িল। আর দুটি বাণ তাঁহার কানের কাছ দিয়া চলিয়া গেল। দ্রোণ হইলেন অর্জুনের গুরু। এতদিন পরে দেখা হইল, প্রণাম করিয়া দুটি কুশল মঙ্গল তো জিজ্ঞাসা করা চাই। এত দূরে থাকিয়া সে কাজ আর কীরূপে হইবে? তাই অর্জুন গুরুর পায়ের কাছে বাণ ফেলিয়া তাঁহাকে প্রণাম জানাইলেন আর কানের কাছে বাণ পাঠাইয়া কুশল জিজ্ঞাসা করিলেন। আর এই সব কাজের অর্থ বুঝিতে পারিয়া দ্রোণের বিশেষ আনন্দ হইল৷

 এদিকে অর্জুন যখন দেখিলেন যে, দুর্যোধনের পলায়ন করিবার চেষ্টা, তখন তিনি উত্তর কে বলিলেন, ‘আগে ঐ হতভাগার কাছে চল।’

 অর্জুনের রথকে দুর্যোধনের দিকে ছুটিতে দেখিয়া কৃপ দ্রোণকে বলিলেন, ‘আর গুরুর ভাবনা ভাবিয়া কাজ নাই! ঐ দেখ, দুর্যোধনের এখন বড়ই বেগতিক!’

 অর্জুন দুর্যোধনের দিকে চলিয়াছে, তাহাকে আটকাইবার জন্য চেষ্টার কিছুমাত্র ত্রুটি হইতেছে না। কিন্তু অজুৰ্নকে আটকায় কাহার সাধ্য! যে তাহার সামনে আসিতেছে, তাহারই তিনি দুর্দশার একশেষ করিতেছে। কেহ পলাইতেছে, কেই মারা যাইতেছে। অনেকে ভ্যাবাচাকা লাগিয়া মার খাইতেছে৷

 অর্জুনকে আটকাইতে গিয়া কর্ণের এক ভাই মারা গেল। কর্ণ তাহাতে ভীষণ রাগের সহিত আসিয়া অর্জুনকে আক্রমণ করিলেন। দু-জনে কিছুকাল এমনি ভয়ানক যুদ্ধ হইল যে, তাহার আর তুলনা নাই। শেষে দেখা গেল যে, হাতে, মাথায়, উরুতে, কপালে আব ঘাড়ে বিষম বাণের খোঁচা খাইয়া কর্ণ উধর্বশ্বাসে পলায়ন করিতেছেন।

 এইরূপে একে-একে সকলেই অর্জুনের হাতে নাকাল হইতে লাগিলেন। কর্ণ পলাইলে আসিলেন কৃপ, কৃপ পলাইলে দ্রোণ। দ্রোণকে অর্জুন অস্ত্র মারিতে চাহেন নাই। কিন্তু দ্রোণ বাণ মারিতে আরম্ভ করিলে অর্জুনকেও যুদ্ধ করিতে হইল। তাহার ফলে দ্রোণও বেশ ফাঁপরে পড়িয়াছিলেন। ইহার মধ্যে অশ্বত্থামা আসিয়া অর্জুনের সহিত যুদ্ধ আরম্ভ করাতে প্রস্থান করিয়া রক্ষা পাইলেন৷

 তারপর কর্ণ আবার আসিয়াছিলেন আর তাঁহার সাজাও তেমনি হইয়াছিল। এবার বুকে সাঙ্ঘাতিক বাণ খাইয়া তিনি রণস্থলেই অজ্ঞান হইয়া যান। তারপর কোনমতে উঠিয়া পলায়ন করেন৷

 এইরূপে কত লোক অর্জুনের কাছে জব্দ হইল, তাহা কত বলিব? সকলে একসঙ্গে তাঁহাকে আক্রমণ করিয়াও তাঁহার কিছুই করিতে পারিলেন না। নিজে ভীষ্ম অজ্ঞান হইয়া গেলেন, তখন সারথি রথ হাঁকাইয়া তাঁহাকে লইয়া প্রস্থান করিল৷

 দুর্যোধন দুবার অর্জুনের সহিত যুদ্ধ করেন। প্রথম বার পলায়ন করিয়াছিলেন। তাহাতে