পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
২৫৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

উদ্যোগপর্ব

ভিমনু আর উত্তরার বিবাহের পরে, বিরাটের বাড়িতে রাজা এবং যোদ্ধাদিগের মস্ত এক সভা হইল৷ বিবাহে যাহারা আসিয়াছেন, তাহারা সকলেই বড়-বড় বীর এবং সকলেই পাণ্ডবদিগের বন্ধু৷ ইহারা পরামর্শ করিতে লাগিলেন যে, এখন কি উপায়ে পাণ্ডবেরা নিজ রাজ্য ফিরিয়া পাইতে পারেন৷ সেই কপট পাশা খেলায় হরিয়া, পাণ্ডবেরা বারো বৎসর বনবাস আর এক বৎসর অজ্ঞাতবাসের প্রতিজ্ঞা করেন৷ সে প্রতিজ্ঞার্তাহারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করিয়াছেন৷ তথাপি দুরাত্মা দুর্যোধনের দল এখন বলিতেছে যে, তেরো বৎসর না যাইতেই তাহাদের সন্ধান পাইয়াছে৷ আসলে তাহদের রাজ্য ছাড়িয়া দিবার কিছুমাত্র ইচ্ছ নাই৷ তাই পাণ্ডবদিগের বন্ধুগণ স্থির করিলেন যে, যদি সহজে উহারা রাজ্য ছাড়িয়া না দেয়, তবে যুদ্ধ করিয়া তাহ আদায় করিতে হইবে৷

 এদিকে দুর্যোধন প্রভৃতিও চুপ করিয়া বসিয়াছিলেন না৷ পাণ্ডবেরা যে তাঁহাদের রাজ্য সহজে ছড়িবেন না, একথা তাঁহারা বেশ জানিতেন৷ সুতরাং দুই দলেই যুদ্ধের আয়োজন আরম্ভ হইল৷ একদিকে যেমন সৈন্য-সামন্ত এবং অস্ত্রশস্ত্রের জোগাড় হইতে লাগিল, অন্যদিকে তেমন বড়-বড় বীরদিগকে ডাকিয়া নিজেদের দলে আনিবার চেষ্টারও ক্রটি হইল না৷

 কৃষ্ণের সাহায্য পাওয়া একটা মস্ত কথা৷ সেজন্য দুর্যোধন আর অর্জুন প্রায় এক সময়েই দ্বারকায় যাত্রা করেন, একই সময়ে সেখানে উপস্থিত হন৷ কৃষ্ণ তখন নিদ্রায়৷ দুর্যোধন আগেই তাহার শয়নঘরে গিয়া, তাহার মাথার নিকটে একটি বড় আসন অধিকার করিলেন; পরে অর্জুন আসিয়া বিনীতভাবে কৃষ্ণের পায়ের কাছে বসিলেন৷

 ঘুম ভাঙ্গিলে প্রথমে পায়ের দিকেই চোখ পড়ে৷ কাজেই কৃষ্ণ জাগিয়া আগে দেখিলেন অৰ্জুনকে, তারপর দেখিলেন দুর্যোধনকে৷ দুজনকেই তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “কিজন্য আসিয়াছ?”

 দুৰ্যোধন হাসিমুখে বলিলেন, “যুদ্ধে আপনার সাহায্য চাহিতে আসিয়াছি৷ আর আমি আগে আসিয়াছি, কাজেই আমার কথাই আপনাকে রাখিতে হইবে৷”

 কৃষ্ণ বলিলেন, “আপনি আগে আসিয়াছেন সত্য৷ আর আমি আগে অৰ্জুনকে দেখিয়াছি একথাও সত্য৷ সুতরাং আমি দুজনকেই সাহায্য করিব৷ একদিকে নারায়ণী সৈন্য নামক আমার অতি ভয়ংকর এক অর্বুদ সৈন্য থাকিবে, অপরদিকে আমি শুধু হাতে থাকিব, কিন্তু যুদ্ধ করিব না৷ এই দুয়ের মধ্যে যাহার যাহা ইচ্ছা নিতে পার৷ অর্জুন বয়সে ছোট, সুতরাং তাহাকেই আগে জিজ্ঞাসা করি৷ বল তো অর্জুন, ইহার কোনটা তোমার পছন্দ হয়?”

 অৰ্জুন বলিলেন, “আমি সৈন্য চাহি না, আপনাকেই চাহি৷”