পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 দুর্যোধনের দলে—ভগদত্তের এক অক্ষৌহিণী, ভূরিশ্রবার এক অক্ষৌহিণী, শল্যের এক অক্ষৌহিণী, কৃতবর্মার এক অক্ষৌহিণী, জয়দ্রথের এক অক্ষৌহিণী, কম্বোজের রাজা সুদক্ষিণের এক অক্ষৌহিণী, ইহা ছাড়া দক্ষিণাপথ, অবন্তী প্রভৃতি নানা দেশ হইতে আরো পাঁচ অক্ষৌহিণী, সবশুদ্ধ এগারো অক্ষৌহিণী সৈন্য হইল।

 এইরূপে দুই দল যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইলেন। আর অল্পদিনের মধ্যেই ভয়ংকর মারামারি কাটাকাটি আরম্ভ হইবে, রক্তে দেশ ভাসিয়া যাইবে, ঘরে ঘরে কান্না উঠিবে। দেশের যত ক্ষত্রিয় বীর, প্রায় সকলেই যুদ্ধের জন্য ব্যস্ত হইয়াছে। হায়! আর অল্পদিন পরে হয়তো উহাদের কেহই বাঁচিয়া থাকিবে না।

 যুদ্ধ কি ভয়ংকর কাজ, আর ক্ষত্রিয়ের কর্ম কি কঠিন! মানুষকে মারিয়া মানুষ মনে করিবে যে, ধর্ম করিলাম! কয়েকজন লোক একটা রাজ্য লইয়া ঝগড়া করিতেছে, তাহার জন্য দেশশুদ্ধ লোক কাটাকাটি করিয়া মরিবে।

 এমন যুদ্ধ কে সহজে করিতে চায়? পাণ্ডবেরা তো তাহা চাহে নাই। তাহারা বলিয়াছিলেন “আমাদের সমুদয় রাজ্য না দেয়, কেবল আমরা নিজ হাতে যেটুকু জয় করিয়া লইয়াছিলাম তাহাই দেউক। তাহাও যদি না দেয়, পাঁচজনকে পাঁচখানি গ্রাম মাত্র দিলেও আমরা সন্তুষ্ট হই।”

 কিন্তু দুষ্ট লোকে লোভে পড়িলে কি আর তাহার ভালো মন্দ জ্ঞান থাকে? কত লোক দুর্যোধনকে বুঝাইল, কিছুতেই তাহার চৈতন্য হইল না। ভীষ্ম, দ্রোণ, বিদুর, সঞ্জয় প্রভৃতি সকলে মিলিয়া কত চেষ্টা করিলেন। কিন্তু যে ইচ্ছা করিয়া শুনিবে না, তাহার কাছে কথা বলিয়া কি ফল? কর্ণ শকুনি প্রভৃতিরা, দুর্যোধনকে ক্রমাগত যুদ্ধ করিবার জন্য উৎসাহ দিয়া, এমন করিয়া তুলিয়াছেন যে, তিনি আর কাহারো কথায় কান দিতে চাহেন না।

 ধৃতরাষ্ট্র মুখে দুর্যোধনের নিন্দা করিয়াছিলেন, আর পাণ্ডবদিগেব সহিত বন্ধুতা করার কথা বারবার বলিয়াছেন। কিন্তু তিনি তাহা সরলভাবে বলেন নাই, কাজেই তাহার কথায় কোনো ফল হয় নাই।

 সকলের শেষে কৃষ্ণ এই যুদ্ধ থামাইবার জন্য অনেক চেষ্টা করেন। কিন্তু তাহার কথা রাখা দূরে থাকুক, দুর্যোধন তাহাকে অপমান করিতেও ত্রুটি করেন নাই। রাজা দিবার কথায় রাজি করিতে না পারিয়া, কৃষ্ণ দুর্যোধনের নিকট পাঁচ ভাইয়ের জন্য পাঁচখানি গ্রাম মাত্র চাহিলেন। তাহার উত্তরে দুর্যোধন বলিলেন কি যে, “খুব সরু ছুঁচের আগায় যতটুকু জায়গা বিধে, তাহার অর্ধেকও বিনা যুদ্ধে দিব না!"

 ইহার উপরে আবার বুদ্ধিমানেরা কৃষ্ণকে বাঁধিয়া রাখিতে চাহিয়াছিলেন! কিন্তু তাহার চেহারা দেখিয়া, আর কাজে তাহা করিতে সাহস হয় নাই। তিনি ধমকের চোটে দুষ্টদিগকে জব্দ করিয়া, সেখান হইতে চলিয়া আসেন।

 আসিবার পূর্বে কৃষ্ণ কর্ণকে নির্জনে ডাকিয়া বলিলেন, “কর্ণ, তুমি কাহার সহিত যুদ্ধ করিতে যাইতেছ? জান কি, পাণ্ডবেরা তোমার ছোট ভাই? তুমি এখনই আমার সঙ্গে চল, তোমার ভাইদের সহিত তোমার পরিচয় করিয়া দিই। পাণ্ডবেরা তোমাকে চিনিতে পারিলে, তোমায় মাথায় করিয়া রাখিবেন। তখন এই পৃথিবীর রাজা হইবে তুমি, আর পাণ্ডবদের প্রধান কাজ হইবে, তোমার সেবা করা, আর তোমার আজ্ঞা পালন করা। তুমি আর অর্জুন দুই মিলিয়া এই পৃথিবীতে কত বড়-বড় কাজ করিবে আর তাহা দেখিয়া আমাদের চক্ষু