পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ভিতরে মিস্ত্রী, মজুর, পাচক, বৈদ্য, কিছুই অভাব নাই। আটা, ঘি, ডাল, চাউল, ঔষধপত্র, কাঠ, কয়লা ইত্যাদি কোনো দরকারি জিনিষেরই ত্রুটি দেখা যায় না।

 আর অস্ত্রের কথা কি বলিব? মানুষের বুদ্ধিতে মানুষকে মারিবার যতরকম উৎকট উপায় হইতে পারে, সকলই প্রস্তুত। রাশি রাশি তোমর (লোহার কাটা পরানো ডাণ্ডা) আছে; ইহার ঘায় হাড় গুড়া এবং বুক ফোঁড়া এক সঙ্গেই হইতে পারে। ভালো মত এপিঠ-ওপিঠ করিয়া ফুড়িতে হইলে তাহার জন্য শক্তির (লোহার বল্লম) আয়োজন যথেষ্ট হইয়াছে। পাশ (ফাঁস) আছে আঁটি আঁটি। এ জিনিস শত্রুর গলায় লাগাইয়া টানিলে, বুঝিতেই পার। আর যদি শত্রুর চুলে ধরিয়া টানিয়া তাহাকে কাবু করিতে হয়, তাহার জন্য অসংখ্য ‘কচ-গ্রহ-বিক্ষেপ’ (লম্বা লাঠির আগায় সাংঘাতিক আঠা) রহিয়াছে। কিংবা যদি আঁকশি লাগাইয়া তাহাকে টানিবার দরকার পড়ে, সে আঁকশিরও ঐ পর্বতাকার ঢিপি! এ অস্ত্রের নাম ‘কর-গ্রহ-বিক্ষেপ’। বালি তৈল আর ঝোলা গুড়ের অন্তই নাই। এসব জিনিস গরম করিয়া শত্রুর গায় ঢালিয়া দিতে হইবে; তাহার জন্য এই বড়-বড় হাতাও আছে। মুখ বাঁধা ভারী ভারী হাঁড়ির ভিতরে ভয়ানক ভয়ানক সাপ। শত্রুর ভিড়ের মধ্যে এই সকল হাঁড়ি ফেলিয়া দিতে পারিলে বেশ কাজ দেয়! ধুপ-ধুনা জ্বালাইয়া ফেলিতে পারিলেও মন্দ হয় না, তাহার ঢিপি পর্বত প্রমাণ, কুল কাঁটার মতন বাঁকানো কাটা পরানো ভয়ানক বল্লম, তাহার নাম ‘অঙ্কুশ তোমর’, এ অস্ত্র শত্রুর পেটে বিধাইয়া টানিলে পেটের ভিতরের জিনিস তখনই বাহির হইয়া আসে।

 ইহা ছাড়া ঢাল, তলোয়ার, খাড়া, বর্শা, লাঠি, গদা, তীর, ধনুক প্রভৃতি সাধারণ অস্ত্র যে কত আছে তাহার তো হিসাবই হয় না। দা, কুড়াল, খুন্তি, কোদাল, এমনকি লাঙ্গল পর্যন্ত বাদ যায় নাই।

 এসকল অস্ত্র বোধহয় সাধারণ সৈন্যদের জন্য। বড়-বড় ক্ষত্রিয় যোদ্ধারা এসকল অস্ত্রের কোনো কোনোটা ব্যবহার করিতেন না, এমন নহে মোটের উপর তাহাদের যুদ্ধ-কৌশল ইহা অপেক্ষা অনেক উঁচুদরের। আর তাহাদের অস্ত্রশস্ত্রও যে অতি আশ্চর্যরকমের, তাহাও আমাদের দেখিতে বাকি নাই।

 সকল আয়োজন শেষ হইলে দুর্যোধন জোড়হাতে ভীষ্মকে বলিলেন, “হে পিতামহ! আপনি যুদ্ধবিদ্যায় শুক্রের সমান পণ্ডিত, আপনি আমাদের সেনাপতি হউন। আপনার পশ্চাতে আমরা নির্ভয়ে যুদ্ধ করিতে যাইব৷”

 ভীষ্ম বলিলেন, “আচ্ছা তাহাই হউক। তোমাকে কথা দিয়াছি, সুতরাং তোমার হইয়া যথাসাধ্য যুদ্ধ করিব;কিন্তু আমার কাছে তোমরা যেমন, পাণ্ডবেরাও তেমনি। এইজন্য আমি কখনো তাহাদিগকে বধ করিতে পারিব না। তোমার অপর শত্রু আমি রোজ হাজার হাজার মারিব৷”

 কর্ণের বড়ই লম্বা-চওড়া কথা কহিবার অভ্যাস, সেজন্য তিনি ভীষ্মের নিকট অনেক বকুনি খান, কাজেই দুজনের মধ্যে একটু চটাচটি আছে। তাহার উপরে আবার দুর্যোধনের দলের রথী এবং মহারথীদিগের নাম করিতে গিয়া, ভীষ্ম কর্ণকে অর্ধরথ (অর্থাৎ আধখানা রথী) বলাতে এই বিরোধ আরো বাড়িয়া গেল।

 শেষে ভীষ্ম বলিলেন, “কর্ণ আমার সঙ্গে বড়ই রেষারেষি করে, আমি তাহার সঙ্গে মিলিয়া যুদ্ধ করিতে পারিব না৷” তাহাতে কর্ণ বলিলেন, “আমিও ভীষ্ম থাকিতে এ যুদ্ধে