পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

হইবে। মারিবার সময় বলিয়া মারিবে। অচেতন লোককে, আর সারথি, সহিস, অস্ত্রবাহক, বাজনদার ইহাদিগকে কখনো প্রহার করিবে না।

 এই সময়ে, ভয়ানক যুদ্ধ উপস্থিত জানিয়া, ব্যাসদেব ধৃতরাষ্ট্রকে দেখিতে আসিলেন। ধৃতরাষ্ট্রের তখন নিতান্তই দুঃখের অবস্থা। পুত্রগণের ব্যবহার, আর যুদ্ধের ভীষণ ফলের কথা ভাবিয়া তিনি আর কুল কিনারা পাইতেছে না। এমন সময় ব্যাসদেব আসিয়া তাহাকে অনেক বুঝাইয়া বলিলেন, “যাহা হইবার, তাহা হইবেই তুমি দুঃখ করিও না। যদি যুদ্ধ দেখিতে চাও, আমি তোমাকে চক্ষু দিতে পারি৷”

 ধৃতরাষ্ট্র বলিলেন, “আত্মীয়গণের মৃত্যু আমি দেখিতে পারিব না। আপনার কৃপায় যুদ্ধের সকল সংবাদ যেন শুনিতে পাই৷”

 এ কথায় ব্যাস সঞ্জয়কে দেখাইয়া বলিলেন, “তোমার এই সঞ্জয়ের নিকট তুমি সকল কথাই শুনিতে পাইবে। আমার বরে, যুদ্ধের কোনো সংবাদই ইহার অজানা থাকিবেনা। দেখা হউক, অদেখা হউক, সকল ঘটনাই, এমনকি, লোকের মনের কথা পর্যন্ত, সে জানিতে পারিয়া তোমাকে শুনাইবে। যুদ্ধের ভিতর গিয়াও সে সুস্থ শরীরে ফিরিয়া আসিবে; অস্ত্রে তাহার কোনো অনিষ্ট হইবে না৷”

 এই কথা বলিয়া ব্যাসদেব আবার ধৃতরাষ্ট্রকে বলিলেন, “এ কাজটা ভালো হইতেছে না; তুমি ইহাদিগকে বারণ কর। তোমার রাজ্যের এতটা কি প্রয়োজন যে, তাহার জন্য এমন পাপ করিতে যাইতেছ? পাণ্ডবদের রাজ্য তাহাদিগকে ফিরাইয়া দাও৷”

 ধৃতরাষ্ট্র বলিলেন, “আমি তো যাহাতে ধর্ম হয় তাহাই চাই, কিন্তু উহারা যে আমার কথা শুনে না৷”

 এইরূপ কথাবার্তার খানিক পরে ব্যাসদেব সেখান হইতে চলিয়া গেলেন।

 এদিকে পাণ্ডব ও কৌরবদিগের সৈন্য সকল যুদ্ধক্ষেত্রে সামনাসামনি ব্যূহ বাঁধিয়া দাঁড়াইয়াছে যুদ্ধ আরম্ভ হইতে আর বিলম্ব নাই।

 ব্যূহ বাঁধা কাহাকে বলে জান? সৈন্যেরা তো যুদ্ধের সময় তাহাদের ইচ্ছামত এলোমেলোভাবে দাঁড়াইতে পায় না; তাহাদিগকে কোনো একটা বিশেষ নিয়মে, বেশ জমাটরূপে গুছাইয়া দাঁড় করাইতে হয়। এইরূপ কায়দা করিয়া দাঁড়ানোর নাম ‘ব্যূহ’। এক একরকম ব্যয়ে এক একরকম নাম; যেমন ‘চক্র’ ব্যূহ, ‘গরুড়’ ব্যূহ ইত্যাদি।

 পাণ্ডবদিগের ব্যূহ দেখিয়া দুর্যোধন দ্রোণকে বলিলেন, “গুরুদেব! দেখুন, পাণ্ডবদের কত সৈন্য, ধৃষ্টদ্যুম্ন তাহাদের ব্যূহ নির্মাণ করিয়াছে। উহাদের দলে খুব বড় বীর আছে তেমনি আমাদেরও তাহার চেয়ে বেশি আছে। তাহা ছাড়া, আমাদের সৈন্য ঢের, উহাদের সৈন্য কম। আমাদের ব্যূহের মাঝখানে ভীষ্ম রহিয়াছেন;তাহাকে রক্ষা করিবার জন্য ব্যূহে ঢুকিবার পথে পথে আপনারা সকলে আছেন৷”

 এ কথা শুনিয়া ভীষ্ম সিংহনাদপূর্বক তাঁহার শঙ্খে ফুঁ দিলেন। সেই শঙ্খের সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার শঙ্খ, শিঙ্গা, ঢাক প্রভৃতি বাজিয়া রণস্থলে তুমূল কাণ্ড উপস্থিত করিল।

 ইহার উত্তরে পাণ্ডবদিগের পক্ষ হইতে, কৃষ্ণের ‘পাঞ্চজন্য’, অর্জুনের ‘দেবদত্ত’, ভীমের ‘পৌণ্ড্র’, যুধিষ্ঠিরের ‘অনন্তবিজয়’, নকুলের ‘সুঘোষ’, আর সহদেবের ‘মণিপুষ্পক’ নামক মহাশঙ্খের ভয়ংকর শব্দের সহিত, ধ্রুপদ, বিরাট, সাত্যকি, ধৃষ্টদ্যুম্ন, শিখণ্ডী প্রভৃতি সকলের