পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৬৭

 আহা! উত্তরের কথা মনে করিয়া বাস্তবিকই দুঃখ হয়। বেচারা সেদিন ভালো করিয়া যুদ্ধ করিতে না করিতেই শল্যের হাতে মারা গেলেন। তিনি এক প্রকাণ্ড হাতিতে চড়িয়া শল্যকে আক্রমণ করেন। হাতি শল্যের রথের ঘোড়াগুলিকে মারিয়া ফেলিল। কিন্তু শল্য তাহার পরেই উত্তরকে এমন ভয়ংকর একটা শক্তি ছুড়িয়া মারিলেন যে, তাহা তাঁহার বর্ম ভেদ করিয়া, একেবারে তাঁহার দেহের ভিতর ঢুকিয়া গেল। সেই শক্তির ঘায়েই উত্তর হাতি হইতে পড়িয়া প্রাণত্যাগ করিলেন।

 উত্তরের দাদা শ্বেত ইহাতে অসহ্য শোক পাইয়া রাগের সহিত কৌরবদিগকে আক্রমণ করেন। খানিক যুদ্ধের পর একটা ভয়ানক বাণের ঘায় তিনি অজ্ঞান হইয়া গেলে, তাহার সারথি তাঁহাকে লইয়া প্রস্থান করে। কিন্তু অল্পক্ষণের ভিতরেই তিনি আবার আসিয়া যুদ্ধ আরম্ভ করেন। এবার তিনি শল্যকে এমন তেজের সহিত আক্রমণ করিলেন যে, ভীষ্ম প্রভৃতি বীরেরা আসিয়া সাহায্য না করিলে, শল্যের প্রাণরক্ষা করাই কঠিন হইত। ভীষ্মের দল আসাতে শল্যও বাঁচিয়া গেলেন, আর যুদ্ধও আবার অতি ঘোরতর হইয়া উঠিল। সেই যুদ্ধে ভীষ্ম কত লোককে যে মারিলেন, তাহার সংখ্যা নাই।

 শ্বেতও সেই সময়ে অসাধারণ বীরত্ব দেখাইয়াছিলেন। সৈন্যরা তাঁহার তেজ সহ্য করিতে পাবিয়া, ভীষ্মের নিকট গিয়া আশ্রয় লয়। ভীষ্ম ছাড়া আর কেহই শ্বেতের সম্মুখে স্থির থাকিতে পারেন নাই। এমনকি, ভীষ্মও এক একবার স্বেতের হাতে রীতিমত জব্দ হইতে লাগিলেন। একবার তো সকলে মনে করিল, বুঝি বা শ্বেতের হাতে তাঁহার মৃত্যুই হয়।

 তখন ভীষ্ম যারপরনাই রাগের সহিত শ্বেতকে অনেকগুলি বাণ মারিলেন; শ্বেতও তাহার সব আটকাইয়া, ভল্ল দ্বাবা তাঁহার ধনুক কাটিয়া ফেলিলেন। ভীষ্ম অমনি আর এক ধনুক লইয়া, শ্বেতের রথের ঘোড়া ধবজ আর সারথিকে মারিয়া ফেলাতে কাজেই তাঁহাকে রথ হইতে লাফাইয়া পড়িতে হইল। তখন তিনি ধনুক রাখিয়া ভীষ্মকে একটা ভয়ংকর শক্তি ছুঁড়িয়া মারেন, কিন্তু তাহা ভীষ্মের বাণে খণ্ড খণ্ড হইয়া যায়। শক্তি বৃথা হওয়ায়, শ্বেদ গদা লইয়া যেই ভীষ্মের উপরে তাহা ছুঁড়িতে যাইবেন, অমনি ভীষ্ম তাহা এড়াইবার জন্য রথ হইতে লাফাইয়া পড়িলেন। সে গদা রথের উপরে পড়িলে আর রথ, ঘোড়া, সারথি, কিছুই অবশিষ্ট রহিল না।

 এদিকে দ্রোণ, কৃপ, শল্য প্রভৃতি যোদ্ধারা সাহায্যের জন্য সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছেন; ভীষ্মের নতুন রথ আসিযাছে। শ্বেতের পক্ষেও সাত্যকি, ভীম, ধৃষ্টদ্যুম্ন প্রভৃতি আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। সুতরাং কিছুকাল সকলে মিলিয়া আবার যুদ্ধ চলিল। এমন সময় ভীষ্ম কি যে এক সাংঘাতিক বাণ ছুঁড়িয়া বসিলেন, শ্বেতের তাহা বারণ করিবার কোনো ক্ষমতাই হইল না, সে বাণ তাঁহার বর্ম ও শরীর ভেদ করিয়া মাটির ভিতরে ঢুকিয়া গেল।

 শ্বেতের মৃত্যুর পর সেদিন আর পাণ্ডবদের যুদ্ধে উৎসাহ রহিল না। এদিকে ভীষ্ম শ্বেতকে মারিয়া, এতই তেজের সহিত যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন যে, মনে হইল, বুঝি এখনি তিনি সকলকে মারিয়া শেষ করেন। তখন সন্ধ্যাও হইয়াছিল, কাজেই যুধিষ্ঠির সেদিনের মতন যুদ্ধ শেষ করিয়া দিয়া দুঃখের সহিত শিবিরে ফিরিলেন।

 সে রাত্রিতে যুধিষ্ঠিরের মনে বড়ই চিন্তা হইতে লাগিল। তিনি সকলকে বলিলেন,