পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৭৩

 ভাইদিগের মৃত্যুতে শকুনি পলায়ন করিলে, দুর্যোধন ইরাবানকে মারিবার নিমিত্ত আর্যশৃঙ্গ নামক এক ভয়ংকর রাক্ষসকে পাঠাইয়া দিলেন। দুরাত্মা যুদ্ধ করিতে আসিয়াই মায়াবলে দুই হাজার অশ্বারোহী রাক্ষস অনিয়া ফেলিল। রাক্ষসের দল মারামারি করিতেছে, সেই অবসরে মায়াবী আর্যশৃঙ্গ আকাশে উঠিয়া গিয়াছে। কিন্তু ইরাবানও মায়া জানিতেন, কাজেই আকাশে উঠিয়াও রাক্ষস তাহার কিছু করিতে পারিল না, তিনি খড়্গ দিয়া দুষ্টকে ক্ষত-বিক্ষত করিতে লাগিলেন।

 ইরাবান নাগের দেশের লোক। নাগেরা যুদ্ধের সংবাদ পাইয়া দলে দলে তাহার সাহায্য করিতে আসিয়া উপস্থিত হইল। রাক্ষসও তখন গরুড় হইয়। সেই কল সাপ গিলিতে আরম্ভ করিল।

 হায়! ইহাতে কি সর্বনাশ হইল! এই ব্যাপার দেখিয়া ইরাবান এমন আশ্চর্য হইয়া গেলেন যে, যুদ্ধের কথা আর তাঁহার একেবারে মনে নাই। সেই সুযোগে দুষ্ট রাক্ষস তাহার মাথা কাটিয়া ফেলি। অর্জুন অনাদিকে ভয়ানক যুদ্ধে ব্যস্ত, ইরাবানের মৃত্যুর কথা তিনি তখন জানিতে পারিলেন না। ভীষ্ম, দ্রোণ, ভীম, দ্রুপদ প্রভৃতিও তখন এত্যেকে হাজার হাজার করিয়া সৈন্য মাবিতেছেন। সে সময়ের অবস্থা কি ভীষণ: যোদ্ধাদিগের কি বিষম রাগ, যেন সকলকে ভূতে পাইয়াছে। ঘটোৎকচ, ভীম, দ্রোণ, ভগদত্ত ইহরা সকলেই অতি অদ্ভুত বীরত্ব দেখাইলেন। সেদিন বিকালবেলার অর্ধেক যুদ্ধ ঘটোৎকচ একেলাই কবিয়াছিল। তখন তাহার ভয় বা ক্লান্তি কিছুই দেখা যায় নাই।

 ভীমকে মারিবার জন্য দুর্যোধনের ভ্রাতারা দ্রোণকে সহায় করিয়া খুবই তেজের সহিত যুদ্ধ করিতে আসেন। কিন্তু ভীম যখন দ্রোণের সাক্ষাতেই তাহাদের এক একটি করিয়া ক্রমাগত বুঢ়োরস্ক, কুণ্ডলী, অনাধৃষ্য, কুণ্ডভেদী, বৈরাট, বিশালাক্ষ্য, দীর্ঘবাহু, সুবাহু ও কনকধবজ এই নয়টিকে বধ করিলেন, তখন অবশিষ্টেরা তাহকে সাক্ষাৎ যমের মতো ভাবিয়া আর পলাইবার পথ পান না।

 ইহারা পলাইয়া গেলে, ভীম অন্যান্য যোদ্ধাগণকে নারিতে আরম্ভ করিলেন। তখন ভীষ্ম, দ্রোণ, ভগদত্ত, কৃপ ইহাদের সাধ্য হইল না যে তাহাকে বারণ করেন।

 রাত্রি হইল, তথাপি যুদ্ধের শেষ নাই। ঘোর অন্ধকার হইলে তবে সেদিন সকলে শিবিরে গেলেন।

 রাত্রিতে দুর্যোধন কর্ণ আর শকুনিকে বলিলেন, “পাণ্ডবদিগকে কেহই মারিতে পারিতেছে না, ইহার কারণ কি? আমার মনে বড়ই ভয় হইয়াছে।”

 এ কথায় কর্ণ বলিলেন, “ভীষ্ম কেবল বড়াই করেন,আসলে তাহার ক্ষমতা নাই। উহাকে অস্ত্র পরিত্যাগ করিতে বলুন, দেখিবেন, আমি দুদিনের মধ্যে পাণ্ডবদিগকে মারিয়া শেষ করিব।”

 দুর্যোধন তখনই ভীষ্মের শিবিরে গিয়া তাঁহাকে প্রণামপূর্বক বলিলেন, “দাদামহাশয়! পাণ্ডবদিগকে মারিতে বিলম্ব করিতেছে কেন? আপনার যদি তাহাদিগকে মারিতে ইচ্ছ না থাকে, তবে না হয় একবার কর্ণকে বলিয়া দেখুন না। তিনি তাহাদিগকে বধ করিবেন।”

 এমন অপমানের কথায় ভীষ্মের মনে নিতান্তই ক্লেশ হইবে, তাহা আশ্চর্য কি? তিনি খানিক চক্ষু বুজিয়া চুপ করিয়া রহিলেন;তারপর বলিলেন, “আমি প্রাণপণে তোমার উপকার

উপেন্দ্র —৩৫