পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
left
ছেলেদের মহাভারত
২৭৫

বলিতেন, “আমি তোমার বাবা নই, তোমার বাবার বাবা!’ সেই দাদামহাশয়কে কি করিয়া মারিব? আমি তাহা পারিব না। মরি সেও ভালো।”

 যাহা হউক, কৃষ্ণের উপদেশে অর্জুনের মনের এই দুঃখ শীঘ্রই দূর হইয়া গেল। ভীষ্মকে না মারিলে জয় নাই; সুতরাং যে উপায়েই হউক তাহাকে মারিতে হইবে।

 রাত্রি প্রভাত হইলে পাণ্ডবেরা রণবাদ্য বাজাইয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইলেন। আজ শিখণ্ডী সকলের আগে, অপর যোদ্ধারা তাহার পশ্চাতে।

 যুদ্ধ আরম্ভ হইবামাত্র, ভীষ্ম পূর্বদিনের ন্যায় একধার হইতে পাণ্ডব সৈন্য শেষ করিতে লাগিলেন। শিখণ্ডী তাহাকে বারণ করিবার জন্য ক্রমাগত বাণ মারিতেছেন, তাতে তাহার ভূক্ষেপ নাই। শিখণ্ডীর বাণ খাইয়া তিনি হাসেন আর বলেন, “তোমার যাহা খুশি কর, আমি তোমার সহিত যুদ্ধ করিব না।”

 শিখণ্ডী তাহার উত্তরে বলিলেন, “তুমি যুদ্ধ কর আর না কর আমার হাতে আজ তোমার রক্ষা নাই।”

 এইরূপে শিখণ্ডী ভীষ্মকে বাণ মারিতেছে, আর ভীষ্ম তার দিকে না তাকাইয়া ক্রমাগত পাণ্ডবদিগের সৈন্য মারিতেছেন;পাণ্ডবেরা তাহাকে কোনমতেই বারণ করিতে পারিতেছেন না। তাহা দেখিয়া অর্জুন মহারাষে কৌরব সৈন্য মারিতে আরম্ভ করিলেন।

 দুর্যোধনের নিজের এমন ক্ষমতা নাই যে তিনি অর্জুনকে আটকান, কাজেই তিনি ভীষ্মকে বলিলেন, “দাদামহাশয়! অর্জুন তো সব মারিয়া শেষ করিল, আপনি ভালো করিয়া যুদ্ধ করুন।

 তাহা শুনিয়া ভীষ্ম বলিলেন, “আমি তোমার নিকট প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলাম যে, রোজ দশ হাজার সৈন্য মারিব। তাহার মতে আমি রোজ দশহাজার সৈন্য মারিয়াছি। আজ যুদ্ধে প্রাণ দিয়া, তুমি যে এতদিন আমাকে অন্ন দিয়াছ, সেই ঋণশোধ করিব।”

 এই বলিয়া তিনি প্রাণপণে যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন।

 এদিকে শিখণ্ডীর বাণের বিরাম নাই। অর্জুন ক্রমাগত তাহাকে উৎসাহ দিয়া বলিতেছে, “ভয় নাই! দাদামহাশয়কে আক্রমণ কর! আমি বাণ মারিয়া তাহাকে বধ করিব।”

 অর্জুনকে বারণ করিবার জন্য দুঃশাসন প্রাণপণে চেষ্টা করিতেছে। কিন্তু খানিক যুদ্ধের পরেই অর্জুনের বাণ সহিতে না পারিয়া, ভীষ্মের রথে গিয়া তাহাকে আশ্রয় নিতে হইয়াছে।

 এদিকে ভগদত্ত, কৃপ, শল্য, কৃতবর্মা, বিন্দ, অনুবিন্দ, জয়দ্রথ, চিত্রসেন, বিকর্ণ, দুর্মর্ষণ, ইহারা সকলে মিলিয়া ভীমকে আক্রমণ করিয়াও তাহার কিছুই করিতে পারেন নাই। তাহাদের হাজার হাজার বাণ সহ্য করিয়া ভীম তাহাদের সকলকে বাণে বাণে অস্থির করিয়া দিয়াছেন।

 এমন সময় অর্জুন আসিয়া ভীমের সহিত মিলিলেন। তখন কৌরবদেরও ভীষ্ম, দুর্যোধন, বৃহদ্বল প্রভৃতি সকলে সেখানে আসিলে, যুদ্ধ বড়ই ভীষণ হইয়া উঠিল। এই গোলমালের ভিতরে শিখণ্ডী তাহার নিজের কাজ ভুলেন নাই। সুযোগ পাইলেই তিনি ভীষ্মের গায়ে বাণ মারিতেছে।

 যুধিষ্ঠির এই সময়ে খুব কাছে ছিলেন। তাঁহাকে দেখিয়া ভীষ্ম বলিলেন, “যুধিষ্ঠির! অনেক প্রাণী বধ করিয়াছি আমার আর বাঁচিয়া থাকিতে ইচ্ছা নাই। আমাকে যদি সুখী করিতে চাহ, তবে শীঘ্র অর্জুনকে লইয়া আমাকে বধ কর।”