পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সুতরাং যুক্তি হইল যে, পরদিন কৌশলে অর্জুনকে যুধিষ্ঠিরের নিকট হইতে সরাইয়া, আর একবার চেষ্টা করিতে হইবে। দ্রোণ বলিলেন, “অর্জুনকে কেহ যুদ্ধের ছলে দূরে লইয়া যাউক। তখন সে ব্যক্তিকে পরাজয় না করিয়া অর্জুন কখনোই ফিরিবে না। সেই অবসরে আমি যুধিষ্ঠিরকে ধরিয়া আনিব।”

 এ কথায় সুশর্মা, সত্যরথ, সত্যধর্মা, সত্যব্রত, সত্যেষু, সত্যকর্মা প্রভৃতি বীরগণ পঞ্চাশ হাজার সৈন্য সমেত, তখনই অগ্নির সম্মুখে প্রতিজ্ঞা করিলেন, “কাল আমরা অর্জুনকে না মারিয়া যুদ্ধ হইতে ফিরিব না। যদি ফিরি তাহা হইলে, যত মহাপাপ আছে, সকলের শাস্তি যেন আমরা পাই!”

 এমন প্রতিজ্ঞা যে করে, তাহাকে বলে সংশপ্তক”। পরদিন যুদ্ধের সময় এই সংশপ্তকগণ অর্জুনকে ডাকিয়া বলিল, “আইস অর্জুন! যুদ্ধ করি!”

 তাহা শুনিয়া অর্জুন যুধিষ্ঠিরকে বলিলেন, “দাদা! আমাকে যখন ডাকিতেছে, তখন তো আমি না গিয়া পারি না।” যুধিষ্ঠির বলিলেন, “দ্রোণ আমাকে ধরিয়া নিতে আসিবেন তাহার কি হইবে?” অর্জুন বলিলেন, “আপনার কাছে সত্যজিৎকে রাখিয়া যাইতেছি। ইনি জীবিত থাকিতে আপনার কোন ভয় নাই। সত্যজিৎ মরিলে আপনারা কেহ রণস্থলে থাকিবেন না।”

 সেদিন সংশপ্তকেরা মিলিয়া কি অর্জুনকে কম ব্যস্ত করিয়াছিল? দলে দলে তাহারা আসিয়া প্রাণের মায়া হুড়িয়া তাহার সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিল। এক এক দলকে শেষ করিয়া অর্জুন যেই যুধিষ্ঠিরের নিকটে ফিরিতে যান, অমনি আর একদল আসিয়া বলে, “কোথায় যাও? এই যে আমরা আছি!”

 আর তাহারা যুদ্ধও এমনি ভয়ানক করিয়াছিল যে কি বলিব! ইহাব মধ্যে আবার নারায়ণী সেনারা আসিয়া তাহাকে অস্থির করিয়া তুলিল। তখন অর্জুন রোষভরে “ত্বাষ্ট্র” অস্ত্র উঁড়িয়া মারিলেন। সে অতি অদ্ভুত অস্ত্র। উহা ছুঁড়িবামাত্র শত্রুদিগের মাথায় গোল লাগিয়া গেল। তখন তাহারা নিজ নিজ সঙ্গীকেই দেখিয়া বলে, “এই অর্জুন! কাট ইহাকে!” এইরূপে তিলেকের মধ্যে তাহারা নিজে নিজে কাটাকাটি করিয়া মরিল।

 তথাপি সে যুদ্ধের শেষ নাই। দেখিতে দেখিতে ললিত্থ, মালব, মাবেক প্রভৃতি যোদ্ধাগণ আসিয়া বাণে বাণে আকাশ ঢাকিয়া ফেলিল। তখন কৃষ্ণ বলিলেন, “অর্জুন! তুমি বাঁচিয়া আছ? আমি তো তোমাকে দেখিতে পাইতেছিনা। অমনি অর্জুন বায়ব্যাস্ত্র মারিয়া শত্রুগণের বাণ তো উড়াইয়া দিলেনই, তাহার সঙ্গে সঙ্গে ভীষণ ঘূর্ণী বাতাস বহিয়া হাতি ঘোড়া সংশপ্তক অবধি সকলকেই শুকনা পাতার মতো উড়িয়া নিল!

 এদিকে দ্রোণাচার্য তাহার কাজ ভুলেন নাই। তিনি যুধিষ্ঠিরকে ধরিতে গিয়া ভয়ানক যুদ্ধ আরম্ভ করিয়াছে। পাণ্ডব সৈন্যগণ তাহাকে কিছুতেই আটকাইতে পারিতেছে না। দ্রোণের হাতে পাণ্ডবপক্ষের বৃক্ষ মরিয়াছেন, সত্যজিৎ মরিয়াছে, দৃঢ়সেন, ক্ষম, বসুদান ইহারাও মরিয়াছেন। যুধিষ্ঠির দেখিলেন বড়ই বিপদ। দ্রোণ সকলকে পরাজিত করিয়া এখন তাহারই দিকে ঝড়ের মতন ছুটিয়া আসিতেছে। সুতরাং তিনি অবিলম্বে ঘোড়া হাঁকাইয়া সেখান হইতে প্রস্থান করিলেন।

 এই সময়ে দুর্যোধন অনেক হতি লইয়া ভীমকে আক্রমণ করেন। ভীম ক্ষণকালের