পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৮৭

হইল না।

 এদিকে অর্জুন সংশপ্তকদিগকে মারিয়া ফিরিবার সময় কৃষ্ণকে বলিলেন, “আজ কেন আমার মন এত অস্থির হইতেছে? আমার শরীরও যেন অবশ হইয়া পড়িতেছে। মহারাজ যুধিষ্ঠিরের কোনো অমঙ্গল হয় নাই তো?”

 শিবিরে প্রবেশ করিয়াই তাহারা দেখিলেন, চারিদিক অন্ধকার, লোকজনের সাড়াশব্দ নাই। অন্যদিন বাদ্য আর কোলাহলে শিবির পরিপূর্ণ থাকে, আজ তাহার কিছুইনাই। বিশেষত, অভিমন্যু প্রত্যহ, অর্জুন শিবিরে আসিবামাত্র, ভাইদিগকে লইয়া হাসিমুখে তাহার নিকট উপস্থিত হয়; আজ সেই অভিমন্যুই বা কোথায়?

 এ সকল কথা আর বাড়াইয়া বলিয়া ফল কি? অভিমন্যুর মৃত্যুর সংবাদ অর্জুনের কিরূপ কষ্ট হইল, তাহা তোমরা কল্পনা করিয়া লও। অভিমন্যুর মতো পুত্র মরিলে যেমন দুঃখ হইতে পারে, তাহা তাহার অবশ্যই হইল। আর সেই দুঃখে দীর্ঘনিঃশাস ফেলিতে ফেলিতে তিনি প্রতিজ্ঞা করিলেন, “কল্য আমি জয়দ্রথকে বধ করিব। যদি কল্য সেই পাপাত্মা জীবিত থাকিতে সূর্য অস্ত হয়, তবে আমি এইখানেই জ্বলন্ত আগুনে প্রবেশ করিব।”

 এই সংবাদ তখনই চরেরা দুর্যোধনের শিবিরে লইয়া গেল। তাহা শুনিয়া জয়দ্রথ ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে সকলকে বলিলেন, “রাজামহাশয়গণ। আপনাদের মঙ্গল হউক! আপনাদের অনুমতি পাইলেই আমি এইবেলা পলায়ন করি!”

 কিন্তু দুর্যোধন তাহাকে সাহস দিয়া বলিলেন, “আমরা এতগুলি লোক থাকিতে তোমার ভয় কি? আমরা তোমাকে রক্ষা করিব।”

 দুর্যোধনের কথায় ভরসা না পাইয়া, জয়দ্রথ দ্রোণের নিকট গিয়া উপস্থিত হইলেন। দ্রোণও তাহাকে খুব সাহস দিয়া বলিলেন, “ভয় নাই! আমি এমন ব্যুহ প্রস্তুত করিব যে, অর্জুন তাহা পারই হইতে পারিবে না। আর যদিই বা অর্জুন তোমাকে মারে, তাহা হইলেও তো তোমার স্বর্গলাভ হইবে। সুতরাং ভয় কি?”

 এসকল কথা আবার পাণ্ডবদিগের চরেরা তাহাদের কাছে গিয়া বলিলে কৃষ্ণ অর্জুনের জন্য বড়ই চিন্তিত হইলেন।

 পরদিন দ্রোণ যে ব্যুহ প্রস্তুত করিলেন, তাহা বড়ই অদ্ভুত। এই বৃহ চবিবশ ক্রোশ লম্বা, আর পিছনের দিকে দশ ক্রোশ চওড়া। ইহার সম্মুখ ভাগে শকটের ন্যায়, পশ্চাদ্ভাগ চক্র বা পদ্মের ন্যায়। ইহার ভিতরে আবার লুকাইয়া সূচী নামক একটি ব্যুহ হইল। কৃতবর্মা, কাম্বোজ, জলসন্ধ, দুর্যোধন প্রভৃতি বীরেরা, জয়দ্রথকে তাহাদের পশ্চাতে রাখিয়া, এই সূচী’ ব্যুহে লুকাইয়া রহিলেন। নিজে দ্রোণ বড় ব্যুহের মুখে এবং ভোজ তাহার পশ্চাতে থাকিয়া সকলকে রক্ষা করিতে লাগিলেন।

 সেদিন অর্জুন কি ভীষণ রণই করিলেন। কৌরব সৈন্যের মধ্যে হাহাকার পড়িয়া গেল। তাহারা পলাইবে কি, যেদিকে চাহে সেইদিকেই দেখে অর্জুন। দুঃশাসন অনেক হাতি লইয়া অর্জুনকে আটকাইতে আসিলেন, মুহূর্তের মধ্যে সে সকল হাতি অর্জুনের বাণে খণ্ড খণ্ড হইয়া গেল। তাহার এক একটা বাণে দুই তিনটা করিয়া মানুষ কাটা যাইতে লাগিল।

 এমন সময়, দুর্যোধনের তাড়ায় দ্রোণ অর্জুনকে আক্রমণ করিলেন। কিছুকাল দুইজনে এমনি যুদ্ধ চলিল যে, তাহার আর তুলনা নাই। কিন্তু অর্জুনের আজ অন্য কাজ রহিয়াছে