পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৯১

আবার আসিয়া যথেষ্ট সাজা পাইলেন। বিকটাকার পার্বতীয় সৈন্যগণ, বিশাল পাথর হাতে যুদ্ধ করিতে আসিয়া, তাহারাও সাত্যকির বাণে খণ্ড খণ্ড হইল। তখন কৌরবেরা কে কোথায় পলায়ন করিবেন তাহই ভাবিয়া অস্থির।

 এমন সময় দ্রোণ দুঃশাসনকে সম্মুখে পাইয়া বলিলেন, “কি দুঃশাসন! এখন তোমার বীরত্ব কোথায় গেল? সকলে সাত্যকির ভয়ে পলাইতেছ অর্জুনের হাতে পড়িলে কি করিবে। এই মুখেই কি পাণ্ডবদিগের সহিত বিবাদ করিতে গিয়াছিলে?”

 এই বলিয়া দ্রোণ পাণ্ডবদিগের সহিত আবার যুদ্ধ আরম্ভ করিলে বীরকেতু, সুধন্বা, চিত্রকেতু, চিত্রবর্মা ও চিত্ররথ নামক পাঞ্চাল রাজের পুত্রগণ দেখিতে দেখিতে তাহার হাতে প্রাণত্যাগ করিলেন। তাহাতে ধৃষ্টদ্যুম্ন মনের দুঃখে রাগের ভরে দ্রোণকে আক্রমণ করাতে, কিছুকাল দুজনে যুদ্ধ চলিল। কিন্তু ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রোণের সম্মুখে টিকিতে পারিলেন না।

 এদিকে সাত্যকি ক্রমে দুঃশাসন ত্রিগর্ত প্রভৃতিকে পরাজয় করিয়া অর্জুনের দিকে চলিয়াছে, আর দ্রোণ পাণ্ডবপক্ষের যোদ্ধার পর যোদ্ধাকে মারিয়া প্রলয় কাণ্ড উপস্থিত করিয়াছে। বৃহৎক্ষেত্র, ধৃষ্টকেতু, চেদিরাজের পুত্র, জরাসন্ধের পুত্র, ধৃষ্টদ্যুম্নের পুত্র ক্ষত্রবর্মা প্রভৃতি কত লোকের দ্রোণের হাতে প্রাণ গেল! সেই পঁচাশি বৎসরের বুড়া রণস্থলে এমনি ছুটাছুটি করিতে লাগিলেন, যেন তিনি যোল বৎসরের বালক।

 মহারাজ যুধিষ্ঠির এই সময়ে চারিদিকে চাহিয়া দেখিতেছিলেন। তখন তাঁহার মনে এই চিন্তা হইল যে, আমি অর্জুনের সন্ধানে সাত্যকিকে পাঠাইলাম, কিন্তু সাত্যকির সাহায্যের জন্য তো কাহাকেও পাঠাই নাই।

 অমনি তিনি ভীমকে সেই কার্যে পাঠাইয়া দিলেন। ভীম খানিক দূর অগ্রসর হইতে না হইতে দ্রোণ তাহাকে বাধা দিয়া বলিলেন, “অর্জুনকে ছাড়িয়াছি, কিন্তু তোমাকে ছাড়িব না।” ভীম বলিলেন, ঠাকুর! অর্জুনকে আপনি দয়া করিয়া ছাড়িয়াছে বলিয়া তো আমার মনে হয় না। সে হয়তো ভদ্রতা করিয়া আপনার মান রাখিয়া গিয়াছে। কিন্তু আমি তো ভালোমানুষ অর্জুন নহি, আমি ভীম! যুদ্ধ করিতে আসিলে গুরু বলিয়া মানিব না।” বলিতে বলিতেই ভীম এক বিশাল গদা ঘুরাইয়া দ্রোণকে ছুড়িয়া মারিয়াছে। বুড়া তখন বাপ’ বলিয়া রথ হইতে এক লাফ! ততক্ষণে ভীম তাহার রথ ঘোড়া সারথি প্রভৃতি একেবারে পুঁতিয়া ফেলিয়াছেন।

 ইহাতে দুর্যোধনের ভ্রাতাগণ ভীমকে আক্রমণ করিলে, তিনি তাহাদের সাতজনকে বধ করিলেন। যাহাদিগকে তিনি সম্মুখে পাইলেন, তাহাদের অল্প লোকই বাঁচিয়া রহিল। এমন সময় তিনি দেখিলেন যে, দ্রোণাচার্য পাণ্ডবপক্ষের যোদ্ধাদিগকে নিতান্ত অস্থির করিয়া তুলিয়াছে। অমনি আর কথাবার্তা নাই,ভীম চক্ষু বুজিয়া দ্রোণের সেই বাণবৃষ্টির ভিতরেই তাহার রথের দিকে ছুটিয়া চলিলেন। তারপর সেই রথখানিসুদ্ধ—হেঁইয়োঃ হোঃ-মার বুড়াকে ছুঁড়িয়া কিন্তু বুড়ার হাড় কি অসম্ভব মজবুত! রথ গুড়া হইল, কিন্তু বুড়া মরিলেন না!

 তারপর আর খানিক দূরে গিয়াই ভীম সাত্যকিকে দেখিতে পাইলেন। আরো খানিক দূরে গিয়া দেখিলেন, ঐ অর্জুন যুদ্ধ করিতেছে! ওঃ! তখন যে ভীমের সিংহনাদ। সিংহনাদ শুনিয়া কৃষ্ণ আর অর্জুনও সিংহনাদ করিতে লাগিলেন। এইসকল সিংহনাদ মহারাজ যুধিষ্ঠিরের