পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৯৩

খড়্গটি ভীম ছুঁড়িয়া মারিলে, তাহাতে কর্ণের ধনুক কাটিয়া গেল। কর্ণ তখনি আর এক ধনুক লইয়া, ভীমের উপরে বাণবৃষ্টি করিতে লাগিলেন।

 তখন ভীম কর্ণকে মারিবার জন্য লাফাইয়া তাহার উপর পড়িতে গেলেন। কিন্তু কর্ণ হঠাৎ গুড়ি মারিয়া রথের তলার সঙ্গে মিশিয়া পড়ায়, তাহাকে ধরিতে পারিলেন না। তারপর ভীমের হাত খালি দেখিয়া, কর্ণ তাহাকে তাড়া করাতে, তিনি এমনি বিপদে পড়িলেন যে, বিপদ যাহাকে বলে! কতকগুলি মরা হাতি সেখানে পড়িয়াছিল; ভীম আর উপায় না দেখিয়া তাহারই পিছনে গিয়া লুকাইলেন। কিন্তু হাতি খণ্ড খণ্ড করিতে কর্ণের মতো বীরের আর কতক্ষণ লাগে? তাহাতে ভীম রথের চাকা হাতির মাথা প্রভৃতি কর্ণকে ছুঁড়িয়া মারিতে লাগিলেন। কিন্তু কর্ণের বাণের কাছে তাহাতেই বা কি ফল হইবে?

 তখন ভীম বজ্রমুষ্টি উঠাইয়া এক কীলে কর্ণকে বধ করিতে যাইতেছিলেন। কিন্তু এই মনে করিয়া ক্ষান্ত হইলেন, আমি কর্ণকে মারিলে অর্জুনের প্রতিজ্ঞা মিথ্যা হইবে। কর্ণও ইচ্ছা করিলে তখন ভীমকে মারিতে পারিতেন। কিন্তু তাহারও মনে হইল যে, কুন্তীর নিকটে তিনি প্রতিজ্ঞা করিয়াছে যে ইহাদিগকে মারিবেন না। তাই তিনি ভীমকে ধনুক দিয়া একটা খোঁচা মাত্র মারিলেন। ভীমও তৎক্ষণাৎ ধনুক কাড়িয়া লইয়া, সাঁই শব্দে এক ঘা লাগাইতে ছাডিলেন না।

 তখন কর্ণ রাগে চোখ লাল করিয়া বলিলেন, “মুখ! পেটুক! কাপুরুষ! তুই কেন আবার যুদ্ধ করিতে আসিয়াছিস? তুই তো যুদ্ধের য’ও জানিস না’ যা: পেট ভরিয়া খা গিয়া। আমার মতো লোকের সঙ্গে যুদ্ধ করা তোর কাজ নহে।”

 তাহাতে ভীম বলিলেন, “ছোটলোক! এতবার আমার সঙ্গে হারিয়াছিস তবুও আবার বড়াই করিস! হারজিত তো ইন্দ্রেরও হয়। আয় না একবার মল্লযুদ্ধ করি; দেখি, তোকে কীচক বধ করিতে পারি কিনা।”

 ভীমের সহিত মল্লযুদ্ধ করিতে কর্ণের সাহস হইল না। কিন্তু তিনি এই ঘটনা লইয়া অর্জুনের সামনেই খুব বড়াই করিতে লাগিলেন। যাহা হউক, অর্জুনের কয়েকটি বাণ আসিয়া গায়ে পড়িলে আর তাহার বড়াই রহিল না। তখন তাহার হঠাৎ মনে হইল যে, বড়াই করার চেয়ে পলায়ন করাতে বেশি কাজ দেয়।

 এই সময়ে সাত্যকি অসাধারণ বীরত্বের সহিত যুদ্ধ করিতে করিতে সেইখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। কিন্তু তাহাকে দেখিয়া অর্জুনের মনে সুখ হইল না। তিনি সাত্যকিকে যুধিষ্ঠিরের কাছে রাখিয়া আসিয়াছিলেন। তিনি চলিয়া আসাতে না জানি মহারাজের কি বিপদই হইয়াছে। বিশেষত এতক্ষণ যুদ্ধ করিয়া সাত্যকির অস্ত্র প্রায় শেষ হইয়া যাওয়ায়, এখন তাহারও খুবই বিপদ। এদিকে ভূরিশ্রবা “রাশি রাশি অস্ত্রসমেত সুন্দর রথে চড়িয়া তাহাকে আক্রমণ করিতে আসিতেছে, তাহার সহিত যুদ্ধ করিবার সম্বল সাত্যকির মোটেই নাই। কাজেই অর্জুনের রাগ হইবার কথা। এখন সাত্যকিকেই বা তিনি কি করিয়া ফেলিয়া যান, আর যে সামান্য বেলাটুকু অবশিষ্ট আছে, ইহার মধ্যে জয়দ্রথকে মারিতে হইবে, তাহারই বা কি করেন?

 সাত্যকি একে অতিশয় ক্লান্ত, তাহাতে আবার অস্ত্রহীন, কাজেই ভূরিশ্রবা তাহাকে যেন নিতান্তই বাগে পাইলেন। তথাপি সাত্যকির যতক্ষণ কিছুমাত্র অস্ত্র অবশিষ্ট ছিল, ততক্ষণ