পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৯৫

না। সেই অবসরে কিন্তু তাহাকে বধ করা চাই।”

 এই বলিয়া কৃষ্ণ মায়াবলে সূর্যকে ঢাকিয়া ফেলিলেন, অর্জুনের মৃত্যুকাল উপস্থিত মনে করিয়া কৌরবদিগের আনন্দের সীমা রহিল না। তখন জয়দ্রথ গলা উঁচু করিয়া দেখিতে লাগিলেন, সূর্য যথার্থই অস্ত গিয়াছে কিনা।

 অমনি কৃষ্ণ বলিলেন, “অৰ্জুন, এই বেলা! ঐ দেখ জয়দ্রথ নিশ্চিন্তে গলা উঁচু করিয়া সূর্য দেখিতেছে। এই বেলা উহার মাথা কাটিয়া ফেল।”

 কিন্তু জয়দ্রথের মাথা কাটা সহজ কাজ নহে। উহার জন্মকালে দেবতারা বলিয়াছিলেন, “যুদ্ধক্ষেত্রে কোনো মহাবীর ইহার মাথা কাটিবেন।” তখন উহার পিতা বৃদ্ধক্ষত্র বলেন, “যে ব্যক্তি আমার পুত্রের মাথা ভূমিতে ফেলিবে, তাহার মাথাও তখনই শতখণ্ড হইবে।” এই বলিয়া বৃদ্ধক্ষত্র বনে গিয়া তপস্যা আরম্ভ করেন। এখন তিনি সমন্তপঞ্চক নামক তীর্থে তপস্যা করিতেছেন।

 এ সকল কথা মনে করিয়া কৃষ্ণ বলিলেন, “সাবধান অৰ্জুন! ইহার মাথাটা তোমার হাতে মাটিতে পড়িলে কিন্তু সর্বনাশ। মাথাটাকে সেই সমন্তপঞ্চক তীর্থে বুড়া বৃদ্ধক্ষত্রের কোলে নিয়া ফেলিতে হইবে।”

 তখন অর্জুন এক বাণেই জয়দ্রথের মাথা কাটিয়া, তাহা মাটিতে পড়িবার পূর্বেই তিনি আর কয়েক বাণে সেটাকে উড়াইয়া সেই সমস্তপঞ্চক তীর্থে, জয়দ্রথের পিতার কোলে নিয়া ফেলিলেন। সেখান হইতে উহা মাটিতে পড়িবামাত্র বৃদ্ধক্ষত্রের মাথা কাটিয়া শতখণ্ড হইয়া গেল।

 তারপর কৃষ্ণ অন্ধকার দূর করিয়া দিলে দেখা গেল যে, তখনো সূর্য একেবারে ডুবিয়া যায় নাই।

 জয়দ্রথেব মৃত্যুতে কৃপ আর অশ্বত্থামা রাগিয়া অর্জুনকে আক্রমণ করিলেন। কিন্তু অর্জুনের বাণ তাঁহারা সহ্য করিতে পারিলেন না।

 সেদিন সন্ধ্যার পরেও আর কেহ শিবিরে যায় নাই। সমস্ত রাত্রি মশাল জ্বালিয়া যুদ্ধ চলিয়াছিল। সে রাত্রিতে দ্রোণ, সাত্যকি, অশ্বত্থামা, ভীম, ঘটোৎকচ প্রভৃতি অতি অদ্ভুত বীরত্ব দেখান, আর অর্জুনের হাতে অসংখ্য লোক মরে। সে সময়ে তাহার বড় ইচ্ছা ছিল যে, কর্ণের সহিত যুদ্ধ করেন; কিন্তু কৃষ্ণের কৌশলে তাহা হয় নাই।

 কর্ণ ঘোরতর যুদ্ধের পর সাত্যকির হাতে পরাজিত হইলেন। তারপর অশ্বত্থামা, কৃতবর্মা প্রভৃতি অনেকেই সাত্যকিকে আক্রমণ করিয়াছিলেন, কিন্তু তাহাকে পরাজয় করিতে কাহারো শক্তি হইল না।

 এদিকে দুর্যোধন যুদ্ধে কিছু করিতে না পারিয়া শেষে দ্রোণকে গালি দিতে আরম্ভ করায় দ্রোণ নিতান্ত দুঃখের সহিত বলিলেন, “দুর্যোধন! কেন বৃথা আমাকে কষ্ট দিতেছ? আমি তো সর্বদাই বলিতেছি যে, অর্জুনকে জয় করা অসম্ভব। পাপ তো কম কর নাই। এখন সে পাপের ফল ভোগ কর।” এই বলিয়া তিনি বাণে বাণে পাণ্ডবদিগকে অস্থির করিয়া তুলিলেন।

 দুর্যোধনও তখন কম তেজ দেখান নাই! হাজার হাজার লোক তাহার হাতে প্রাণত্যাগ করে। তারপর যুধিষ্ঠির আসিয়া ধনুক কাটিয়া দশ বাণেই তাহাঁকে কাতর করিয়া দেন। যুধিষ্ঠির আবার বাণ মারিলে আর দুর্যোধন যুদ্ধ করিতে পারেন নাই।