পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬৯
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 দ্রোণ আর ভীমের কথা কি বলিব? দ্রোণ ঘোরতর যুদ্ধ করিয়া কেকয়গণ, ধৃষ্টদ্যুম্নের পুত্রগণ ও শিবিকে বিনাশ করিলেন। আর ভীম কীল মারিয়া কলিঙ্গরাজের পুত্র ধ্রুব, আর লাথির চোটে দুর্মদ এবং দুষ্কর্ণকে সংহার করিলেন।

 ঘটোৎকচ আর অশ্বত্থামার সে সময়ে যে যুদ্ধ হইয়াছিল, তাহা বড়ই অদ্ভুত। রাত্রিতে রাক্ষসদের বল বাড়ে, আর রাক্ষসেরা নানারকম মায়াও জানে, তাহার উপর আবার ঘটোৎকচ অসাধারণ বীর। সুতরাং অশ্বত্থামা যে নিতান্ত সঙ্কটে পড়িয়াছিলেন, তাহাতে সন্দেহ কি? কিন্তু এমন সঙ্কটেও তিনি কিছুমাত্র কাতর হ্ন নাই। ঘটোৎকচের সকল মায়া তিনি তিনবার চূর্ণ করিয়া দিলেন।

 ঐ সময়ে ঘটোৎকচের পুত্র অঞ্জনপর্বা অশ্বত্থামাকে আক্রমণ করিয়া অল্পক্ষণের মধ্যেই মারা গেলে, ঘটোৎকচ অশ্বত্থামার উপরে ঘোরতর বাণবৃষ্টি আরম্ভ করে। সে সকল বাণ অশ্বত্থামা কাটিয়া ফেলিলে সে এমনি অদ্ভুত এক পাহাড় আনিয়া উপস্থিত করিল যে, বলিব! সে পাহাড়ের ঝর্ণা সকল হইতে ক্রমাগত শেল, শূল, মুষল, মুদগর প্রভৃতি অস্ত্র অশ্বত্থামার উপর পড়িতে লাগিল।

 পাহাড় অশ্বত্থামার বাণে চুর্ণ হইলে, ঘটোৎকচ মেঘের রূপ ধরিয়া ক্রমাগত অশ্বত্থামার উপরে প্রস্তরবৃষ্টি আরম্ভ করিল। কিন্তু অশ্বত্থামার বায়ব্য’ অস্ত্রে সে সকল পাথরসুদ্ধ মেঘ কোথায় উড়িয়া গেল, তাহার ঠিক নাই।

 তখনি আবার কোথা হইতে বিকটাকার রাক্ষসগণ অশ্বত্থামাকে গিলিতে আসিল। কিন্তু অশ্বত্থামা তাহাতেও কাতর হইলেন না। রাক্ষসেরা দেখিতে দেখিতে তাহার বাণে খণ্ড খণ্ড হইয়া গেল।

 ইহা দেখিয়া ঘটোৎকচ অশ্বত্থামাকে একটা বজ্র ছুডিয়া মারে। অশ্বত্থামা সেই বজ্র লুফিয়া লইয়া উল্টিয়া ঘটোৎকচকেই আবার তাহা ছুঁড়িয়া মারিলে তাহাতে ঘটোৎকচের ঘোড়া, সারথি আর ধবজ কাটিয়া গেল। এই সময় ধৃষ্টদ্যুম্ন ঘটোৎকচকে সাহায্য করিতেছিলেন, তথাপি অশ্বথামার বাণে সে এতই কাতর হইয়া পড়িল যে, ধৃষ্টদ্যুম্ন তাহার মৃত্যু হইল ভাবিয়া তাড়াতাড়ি সেখান হইতে পলাইয়া গেলেন।

 এদিকে সোমদত্ত ও বাহ্লীকের সহিত ভীম আর সাত্যকির যুদ্ধ চলিয়াছে। সোমদত্তকে ভীম পরিঘের আঘাতে অজ্ঞান করিয়া ফেলিলে তাহার পিতা বাহ্লীক ভীমকে আক্রমণ করেন। বহ্লীকের শক্তির ঘায়ে ভীম অচেতন হইয়া গিয়াছে। কিন্তু মুহূর্ত পরেই আবার উঠিয়া তিনি এমন এক গদা ছুড়িয়া মারিলেন যে, তাহাতে বাহ্লীকের মাথা চূর্ণ হইয়া গেল।

 তারপর ভীম নাগদত্ত, দৃঢ়রথ, বীরবাহ প্রভৃতি দুর্যোধনের নয়টি ভাইকে মারিয়া কর্ণের ভ্রাতা ভূকরথ শকুনির ভাই শতচন্দ্র ও ধৃতরাষ্ট্রের আর সাতটি শ্যালককে সংহার করিলেন।

 আর এক স্থানে যুধিষ্ঠিরকে অনেক লোক মারিতে দেখিয়া, দ্রোণ আসিয়া তাহাকে আক্রমণ করিলেন। কিন্তু কিছুতেই তাহাকে পরাজয় করিতে পারিলেন না। যুধিষ্ঠির তাহার বায়ব্য, বারুশ, যাম, আগ্নেয়, ত্বাষ্ট্র, সাবিত্রী প্রভৃতি সকল অস্ত্র কাটিয়া শেষ করিলেন। দ্রোণের ঐন্দ্র ও প্রাজাপত্য অস্ত্র যুধিষ্ঠিরের মাহেন্দ্র অস্ত্রে কাটা গেল। তখন দ্রোণ রোষভরে ব্রহ্মাস্ত্র হাতে করিলে, যোদ্ধাদের আতঙ্কের সীমাই রহিল না। কিন্তু যুধিষ্ঠির তাহাতে কিছুমাত্র ভয় না পইিয়া, নিজের ব্রহ্মস্ত্রে দ্রোণের ব্রহ্মাস্ত্র বারণ করিলেন। কাজেই দ্রোণের আর