পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৯৭

যুধিষ্ঠিরকে পরাজয় করা হইল না।

 এই সময় কর্ণ পাণ্ডব সৈন্যদিগকে বড়ই অস্থির করিয়া তোলেন। তাহারা তাহার বাণের জ্বালায় হতবুদ্ধি হইয়া পলায়ন করিতে থাকে। তখন অর্জুন না থাকিলে কি হইত, কে জানে? অর্জুন আসিয়া কর্ণের ধনুক, ঘোড়া আর সারথি কাটিয়া তাহাকে বাণে বাণে সজারুর প্রায় করিয়া দেন। কৃপের রথ সেখানে ছিল তাই রক্ষা, নহিলে সে যাত্রা কর্ণের প্রাণ বাঁচানোই ভার হইত।

 ইহার পর ভীষণ যুদ্ধে সাত্যকির হাতে সোমদত্তের মৃত্যু হয়। যুধিষ্ঠিরও তখন দ্রোণের সহিত খুব যুদ্ধ করিতেছিলেন;এমনকি, মুহূর্তকের জন্য তাঁহাকে অজ্ঞান করিতেও ছাড়েন নাই। কিন্তু কৃষ্ণ তাহাকে বারণ কবিয়া বলিলেন, “উনি সর্বদা আপনাকে ধরিয়া নিবার চেষ্টায় আছেন, উহার সহিত আপনার যুদ্ধ না করাই ভালো।”

 ইহার কিছু পরে কৃতবর্মার সহিত যুদ্ধ করিতে গিয়া যুধিষ্ঠির অজ্ঞান হইয়া যান; অন্যেরা তাড়াতাড়ি তাহাকে সেখান হইতে লইয়া গিয়া তাহার প্রাণ বাঁচায়।

 তারপর আবার অশ্বত্থামা এবং ঘটোৎকচের ঘোরতর যুদ্ধ হয়। এবারেও জয় অশ্বত্থামারই হইল। দুর্যোধন এই সময়ে ভীমকে আক্রমণ করিয়া ক্রমাগত পাঁচবার তাহার ধনুক কাটিলেন। তাহাতে ভীম ধনুক ছাড়িয়া শক্তি ছুঁড়িয়া মারিলে তাহাও দুর্যোধন কাটিতে ছাড়িলেন না। তখন ভীম দুর্যোধনের রথের উপবে এমনি বিশাল এক গদা হুঁডিয়া মারিলেন যে তাহাতে রথ, ঘোড়া, সাবথি সব চুরমার হইয়া গেল। দুর্যোধন ভয়ে কাপিতে কাপিতে নন্দকের রথে উঠিযা প্রাণ বাঁচাইলেন, কিন্তু ভীমের মনে হইল বুঝি রথ আর ঘোড়াব সহিত তিনিও চূর্ণ হইয়াছেন।

 এই সময়ে সহদেবের সহিত কর্ণের যুদ্ধ হয়; আর সহদেব দেখিতে দেখিতে তাহাতে হারিয়া যান। তখন কর্ণ ইচ্ছা করিলেই তাহাকে বধ করিতে পারিতেন, কিন্তু কুন্তীর কথা ভাবিয়া ক্ষান্ত রহিলেন।

 শকুনি কিন্তু নকুলের হাতে খুবই সাজা পাইলেন। শিখণ্ডীরও কৃপের হাতে প্রায় সেইরূপ দশা হইল। তাপর দ্রোণ আর ধৃষ্টদ্যুম্নে, কর্ণ আর সাত্যকিতে;এইরূপ করিয়া কত যে যুদ্ধ হইল, তাহাব শেষ নাই। এদিকে, এ সকল যুদ্ধের ভিতরেই, অর্জুনের গাণ্ডীবের ভয়ংকর শব্দ ক্রমাগত দূর হইতে শোনা যাইতেছিল। তিনি যে এখন কত লোক মারিতেছিলেন, তাহার সংখ্যা নাই। তাহাকে আটকাইতে আসিয়া শকুনি আর তাহার পুত্র উলুক বড়ই লজ্জা  পাইলেন।

 ইহাতে দুর্যোধনের নিকট বকুনি খাইয়া, দ্রোণ আর কর্ণ মহারোষে পাণ্ডব সৈন্য মারিতে আরম্ভ করিলেন। তখন বেচারারা দ্রোণের বিক্রম সহ্য করিতে না পারিয়া পলায়ন করিতে লাগিল। যতক্ষণ না অর্জুন আসিয়া দ্রোণ আর কর্ণকে আক্রমণ করিলেন, ততক্ষণ আর তাহারা যুদ্ধক্ষেত্রে আসিতে সাহসই পায় নাই। খানিক পরে আবার কর্ণ এমনি ভয়ংকর হইয়া উঠিলেন যে, সৈন্যদের কথা দুরে থাকুক, স্বয়ং যুধিষ্ঠিরের ভাবনা হইল, এখন যুদ্ধ করি, না পলায়ন করি।

 অর্জুন আর সহ্য করিতে না পারিয়া কৃষ্ণকে বলিলেন, “শীঘ্র কর্ণের নিকট চলুন, আজ হয় আমি উহাকে বধ করিব, না হয় ঐ আমাকে বধ করিবে।”


উপেন্দ্র —৩৮