পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
৩০১

 যুধিষ্ঠিরের মুখে অশ্বত্থামার মৃত্যুর কথা শুনিয়া, দ্রোণ নিতান্তই কাতর হইয়া পড়িলেন। তখন ধৃষ্টদ্যুম্ন তাঁহাকে আক্রমণ করিলেন, তিনি আর আগের মতো যুদ্ধ করিতে পারিলেন না। তথাপি তিনি অনেকক্ষণ যুঝিয়াছিলেন, এবং সহজে কেহ তাঁহার কিছু করিতে পারে নাই।

 এমন সময় ভীম আবার আসিয়া বলিলেন, “কিসের জন্য এত যুদ্ধ করিতেছে? অশ্বত্থামা তো মরিয়া গিয়াছে।”

  তখন দ্রোণ অস্ত্র ফেলিয়া দিয়া বলিলেন, “হে মহাবীর কর্ণ! হে কৃপাচার্য! হে দুর্যোধন! আমি বারম্বার বলিতেছি, তোমরা ভালো করিয়া যুদ্ধ কর! তোমাদের মঙ্গল হউক; আমি অস্ত্রত্যাগ করিলাম।” এই বলিয়া তিনি ভগবানের চিন্তায় মন দিলেন।

 এমন সময় দেখা গেল যে, ধৃষ্টদ্যুম্ন অসি হস্তে দ্রোণকে কাটিতে চলিয়াছেন। রণভূমিসুদ্ধ লোক তাহাতে শিহরিয়া উঠিল। সকলে চিৎকার করিয়া বলিল, “হায় হায়! এমন কাজ করিও না।” অর্জুন রথ হইতে লাফাইয়া পড়িয়া তাহাকে বারণ করিতে ছুটিলেন। কিন্তু হায়! কিছুতেই কিছু হইল না; অর্জুন তাঁহাকে ধরিবার পূর্বেই তিনি তাহার নিষ্ঠুর নীচ কাজ শেষ করিয়া ফেলিলেন।

 দ্রোণের মৃত্যুতে কৌরবেরা ভয়ে হতবুদ্ধি হইয়া পলায়ন করিতে লাগিল। দুর্যোধন পলাইলেন, কর্ণ পলাইলেন, শল্য পলাইলেন, কৃপ কাঁদিতে কাঁদিতে রণস্থল ছাড়িয়া চলিলেন। সকলেই ভাবিলেন যে, আজ বুঝি কৌরব সৈন্য নিঃশেষ হইয়া গিয়াছে।

 অশ্বত্থামা অন্যদিকে যুদ্ধে ব্যস্ত ছিলেন; তিনি এ বিপদের কিছুই জানিতে পারেন নাই। সকলকে পলায়ন করিতে দেখিয়া, তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমরা কিজন্য এমন করিয়া পলাইতেছ?”

 ইহার উত্তরে যখন তাঁহাকে দ্রোণের মৃত্যু সংবাদ শোনানো হইল, তখন তিনি অশ্রু মুছিতে মুছিতে বলিলেন, “আজ নিশ্চয় আমি পাণ্ডবপক্ষের সকলকে বিনাশ করিব।”

 অশ্বত্থামার নিকট নারায়ণ অস্ত্র নামক একখানি অতি ভয়ংকর অস্ত্র ছিল। সে অস্ত্র ছুঁড়িলে, কাহারো সাধ্য হয় না যে তাহাকে আটকায়। অমরই হউক আর দেবতাই হউক, সে অস্ত্র গায়ে পড়িলে, তাহাকে মরিতেই হইবে। স্বয়ং নারায়ণ এই অস্ত্র দ্রোণকে দেন, দ্রোণের নিকট হইতে তাহা অশ্বথামা পান। সেই অস্ত্র এখন তিনি ধনুকে জুড়িলেন।

 নারায়ন অস্ত্র ছুঁড়িবামাত্র ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত এবং ভূমিকম্প আরম্ভ হইল, সূর্য মলিন হইয়া গেল, চারিদিকে অন্ধকার ঘিরিয়া ফেলিল, সাগর উথলিয়া উঠিল, নদী সকলের স্রোত ফিরিয়া গেল। সেই সাংঘাতির অস্ত্রের ভিতর হইতে, আগুনের মতো অসংখ্য অস্ত্র বারি হইয়া, জ্বলিতে জ্বলিতে, ঘোর গর্জনে পাণ্ডবদিগকে তাড়া করিল। তখন আর কেহই মনে করিল না যে, তাহাদের রক্ষা পাওয়ার কোন উপায় আছে।

 কিন্তু উপায় ছিল; তাহা কৃষ্ণ জানিতেন। তিনি সকলকে বলিলেন, “তোমরা শীঘ্র অস্ত্র ফেলিয়া নামিয়া দাঁড়াও, তাহা হইলে এ অস্ত্রে কিছুই করিতে পারিবে না। অমনি সকলে অস্ত্রত্যাগ করিয়া, হাতি, ঘোড়া, রথ, যিনি যাহার উপর ছিলেন, তাহা হইতে নামিয়া পড়িলেন। কিন্তু ভীম রোখা লোক, তিনি বলিলেন, “অস্ত্র ছাড়িব কেন? এই গদা দিয়ে আমি নারায়ণ অন্ত্রকে পিষিয়া দিব।” বিষম বিপদ আর কি! ভীম কিছুতেই অস্ত্র ছড়িবেন না। নারায়ণ অস্ত্রকে অগ্রাহ্য করিয়া তিনি অশ্বত্থামাকে আক্রমণ করিতে গেলেন; আর নারায়ণ অস্ত্রের