পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

তিন বাণ দুর্যোধনের বুকে আসিয়া পড়িল, দুর্যোধন তাহা গ্রাহ্য না করিয়া, উল্টিয়া যুধিষ্ঠিরকে পাঁচ বাণ আর একটা শক্তি মারিলেন। সেই শক্তি কাটা গেলে, দুর্যোধন মারিলেন একটা ভল্ল; তাহার উত্তরে যুধিষ্ঠিরের এক বাণ আসিয়া তাহার গায়ে বিষম বিধিয়া গেল। তখন দুর্যোধন বিশাল গদা হাতে যুধিষ্ঠিরকে মারিতে গিয়া তাহার শক্তির ভীষণ ঘায়ে রথের উপরে অজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছে, এমন সময় ভীম আসিয়া যুধিষ্ঠিরকে বারণ করিয়া বলিলেন, “আমি প্রতিজ্ঞা করিয়াছি দুর্যোধনকে মারিব, সুতরাং আপনার এখন উহাকে মারা উচিত নহে।”

 এ কথায় যুধিষ্ঠির দুর্যোধনকে ছাড়িয়া দিলেন। তারপর সন্ধ্যা পর্যন্ত বড়ই ভয়ানক যুদ্ধ চলিল। এই সময়ে সর্বাপেক্ষা অধিক বীরত্ব দেখান কর্ণ আর অর্জুন। দুজনেই অসংখ্য সৈন্য বিনাশ করেন। বিশেষত কর্ণের অত্যন্ত বাড়াবাড়ি আরম্ভ হইলে, অর্জুন এমনি অসাধারণ যুদ্ধ করেন যে কৌরবেরা তাহা দেখিয়া, ভয়ে চক্ষু বুজিয়া, আর্তনাদ করিতে থাকেন। তাহাদের ভাগ্যবলে এই সময়ে সন্ধ্যা আসিয়া উপস্থিত হইল। তখন তাহারা যুদ্ধ শেষ করিতে আর কিছুমাত্র বিলম্ব করিলেন না।

 কর্ণ সর্বদাই বড় বড় কথা কহেন। সেদিন নাকালের একশেষ হইয়াও তিনি বলিলেন, “অর্জুন আজ হঠাৎ অস্ত্র বৃষ্টি করিয়া আমাদিগকে ফাঁকি দিয়াছে, কিন্তু কাল আমি তাহাকে জব্দ করিব।”

 রাত্রি প্রভাত হইলে কর্ণ দুর্যোধনকে বলিলেন, “আজ হয় আমি অর্জুনকে মারিব, না হয় সে আমাকে মারিবে। কিন্তু আমার একজন ভালো সারথি চাই। আমার বিজয় নামক বিশ্বকর্মাকৃত যে আশ্চর্য ধনুক আছে, তাহা অর্জুনের গাণ্ডীবেব চেয়ে কম নহে। এখন কৃষ্ণের মতো একটি সারথি পাইলেই, আমি পাণ্ডবদিগকে অনায়াসে পরাজয় করিতে পারি।”

 তারপর তিনি বলিলেন, “শল্য যদি আমার সারথি হন, তবে নিশ্চয় অর্জুনকে বধ করিব। মহাবীর শল্য কৃষ্ণ অপেক্ষাও ভালো সারথি আর আমি তো অর্জুনের চেয়ে বড় যোদ্ধা আছিই। সুতরাং শল্য আমার সারথি হইলে, দেবাসুরগণও আমার হাত হইতে বাঁচিয়া যাইতে পারিবেন না।”

 তখন দুর্যোধন শল্যকে বলিলেন, “মামা! আপনাকে কর্ণের সারথি হইতে হইতেছে।”

 একথায় শল্য রাগে চোখ ঘুরাইয়া বলিলেন, “কি এত বড় কথা! আমাকে বল সূতপুত্রের (সারথির ছেলে) সারথি হইতে! আমি কি তাহার চেয়ে কম, যে আমি তাহার সারথি হইতে যাইব? চলিলাম আমি এখান হইতে!”

ইহাতে দুর্যোধন ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “রাম রাম! আপনি কেন তাহার চেয়ে কম হইতে যাইবেন? কৃষ্ণ কি অর্জুনের চেয়ে কম? আমি তো মনে করি যে অর্জুনের চেয়ে বড়, আর আপনি কৃষ্ণের চেয়েও বড়!”

 এ কথায় শল্য বলিলেন, “তুমি যে আমাকে কৃষ্ণের চেয়ে বড় বলিলে, ইহাতে আমি বড়ই তুষ্ট হলাম। আচ্ছা তবে আমি কর্ণের সারথি হইব, কিন্তু আমার একটা নিয়ম থাকিল। আমার যাহা খুশি তাহাই আমি কর্ণকে বলিব।”

 কর্ণ তাহাতেই রাজি হইয়া রথে উঠিলেন। আর উঠিয়াই শল্যকে বলিলেন, “রথ চালাও। আমি এখনি অর্জুন, ভীম, নকুল, সহদেব আর যুধিষ্ঠিরকে সংহার করিব।”

 ইহাতে শল্য বলিলেন, “সূতপুত্র! ইন্দ্রও যাঁহাদিগকে ভয় করেন, তুমি কোন সাহসে