পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
৩২৩

বারণের জন্য আমি অস্ত্র ছুঁড়িয়াছিলাম। আমার অস্ত্র থামাইলেই উহার অস্ত্র আমাদিগকে ভস্ম করিবে। অতএব যাহাতে সকলে রক্ষা পাই আপনারা তাহা করুন৷”

 এ কথা বলিয়াই অৰ্জুন তাঁহার অস্ত্র থামাইয়া দিলেন। অতিশয় সত্যবাদী সাধুপুরুষ না হইলে সে অস্ত্র থামাইতে পারে না। মনের ভিতরে কিছুমাত্র মন্দভাব লইয়া উহা থামাইতে গেলে, উহাতে তৎক্ষণাৎ নিজেরই মাথা কাটা যায়। অর্জুন অসাধারণ সাধুপুরুষ ছিলেন, তাই তিনি ইচ্ছামাত্রই তাঁহার অস্ত্র থামাইয়া দিলেন।

 কিন্তু অশ্বত্থামা তাঁহার অস্ত্র থামাইতে না পারিয়া, মুনিদিগকে বলিলেন, “আমি ভীমের ভয়ে অস্ত্র ছাড়িয়াছিলাম, এখন তো আর থামাইতে পারিতেছি না; বড় অন্যায় কাজ করিয়াছি; এ অস্ত্র নিশ্চয়ই পাণ্ডবদিগকে বিনাশ করিবে৷”

 কিন্তু মুনিরা এরূপ অন্যায় কথায় কিছুতেই সম্মত হইলেন না। তাঁহারা বলিলেন, “অৰ্জুন যখন তাঁহার অস্ত্র ফিরাইয়া লইয়াছেন, অশ্বথামারও পাণ্ডবদিগকে রক্ষা করা নিতান্ত উচিত৷”

 বাস্তবিকই কেবল পাণ্ডবদেরই ক্ষতি হইবে, অশ্বত্থামার কিছুই হইবে না এমন হইলে অর্জুন তাঁহার অস্ত্র থামাইতে রাজি হইবেন কেন? অথচ এদিকে অশ্বত্থামার নিজের অস্ত্র থামাইবার শক্তি না থাকায় পাণ্ডবদিগের কিছু ক্ষতি না হইয়া যাইতেছে না। এ অবস্থায় অশ্বত্থামার অস্ত্রে অভিমন্যুর শিশুপুত্রটি মারা যাইবে; আর অশ্বত্থামা তাহার মাথার মণি পাণ্ডবদিগকে দিবেন।

 এইরূপে পাণ্ডবেরা অশ্বথামার মাথার মণি আনিয়া দ্রৌপদীকে দিলে, সেই মণি যুধিষ্ঠিরের মাথায় পরাইয়া, এত দুঃখের ভিতরেও তিনি কিঞ্চিৎ সুখ পাইলেন।

 আর অভিমন্যুর সেই পুত্রটির কি হইল? শিশুটি তখনো জন্মে নাই, সেই অবস্থায়ই সে মারা গেল। তাহার জন্মের পর মরা ছেলে দেখিয়া সকলে কাঁদিতে আরম্ভ করিলে, কৃষ্ণ আসিয়া তাহাকে বাঁচাইয়া দিলেন। ছেলেটির নাম হইল পরীক্ষিৎ। যুধিষ্ঠিরের পরে এই পরীক্ষিৎ হস্তিনায় ষাটস হাজার বৎসর রাজত্ব করিয়াছিল।


স্ত্রীপর্ব

ঠারো দিনের পর কুরুক্ষেত্রের সেই ভীষণ যুদ্ধের শেষ হইল। আঠারো অক্ষৌহিণী লোক এই যুদ্ধে প্রাণ দিযাছে। এখন সেই সকল যোদ্ধার ঘরে ঘরে শোকের আগুন জ্বলিয়া উঠিয়াছে। কিন্তু কেবল শোক করিয়া তো আর চলিবে না, মৃত লোকদের শ্রাদ্ধাদির আয়োজন করা চাই।

 একশত পুত্রের শোক কি সহজ কথা? সামলাইয়া উঠিতে ধৃতরাষ্ট্রের বড়ই কষ্ট হইল। ব্যাস, বিদুর প্রভৃতি অনেকে বুঝাইয়াও তাঁহাকে সহজে শাস্ত করিতে পারিলেন না।