পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
৩৩৭

 এক মাস কাল ধৃতরাষ্ট্রের আশ্রমে থাকিয়া, যুধিষ্ঠির প্রভৃতিরা হস্তিনায় ফিরিয়া আসেন। তারপর দুই বৎসর চলিয়া গেলে, একদিন দেবর্ষি নারদ যুধিষ্ঠিরের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন। নারদ ধৃতরাষ্ট্রের আশ্রম দেখিয়া আসিয়াছেন, এ কথা জানিতে পারিয়া, যুধিষ্ঠির তাঁহাকে বলিলেন, “ভগবন্! যদি জ্যাঠামহাশয়, জ্যেঠিমা, মা এবং সঞ্জয়ের কোনো সংবাদ পাইয়া থাকেন, তবে দয়া করিয়া তাহা বলুন।”

 নারদ বলিলেন, “তোমরা তপোবন হইতে চলিয়া আসিলে, ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী, কুন্তী আর সঞ্জয় অতি কঠোর তপস্যা আরম্ভ করেন। সে সময়ে ধৃতরাষ্ট্র আর গান্ধারী জল ভিন্ন আর কিছুই খাইতেন না, কুন্তী মাসে একবার আহার করিতেন, সঞ্জয় পাঁচদিনে একবার আহার করিতেন।

 একদিন ধৃতরাষ্ট্র আর গান্ধারী কুন্তীব সঙ্গে বনের দিকে যাত্রা করেন। তাঁহারা ফিরিয়া আসিবার সময় ভীষণ দাবানল জ্বলিয়া উঠিল। অনাহারে নিতান্ত দুর্বল থাকায় সে আগুন হইতে কোনোমতেই তাঁহাদের পলায়নের শক্তি হইল না। তখন ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়কে বলিলেন, সঞ্জয়! তুমি শীঘ্র এখান হইতে পলায়ন করিয়া প্রাণরক্ষা কর। আমরা এই অগ্নিতেই দেহত্যাগ করিয়া স্বর্গে যাইব।

 এই বলিয়া ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী এবং কুন্তী, পূর্বমুখে ভগবানের ধ্যান আরম্ভ করিলে, দেখিতে দেখিতে তাঁহাদের দেহ ভস্ম হইয়া গেল।

 সঞ্জয় অনেক কষ্টে সেই অগ্নি হইতে রক্ষা পাইয়া, তাপসগণের নিকট এই সংবাদ প্রদানকালে আমি তথায় উপস্থিত ছিলাম। তপস্বীদিগকে এই সংবাদ দিয়া, সঞ্জয় হিমাচলে চলিয়া গিয়াছে। তারপর আমি, তোমাদিগকে এই সংবাদ দিবার জন্য এখানে আসিয়াছি। আসিবার সময় আমি ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী আর কুন্তীর শরীর দেখিয়া আসিয়াছি। তাঁহারা ইচ্ছাপূর্বকই অগ্নিতে প্রাণ বিসর্জন করায় তাহাদের স্বর্গলাভ হইবে। অতএব তাঁহাদের জন্য তোমাদের শোক করা উচিত নহে।”

 হায়, কি কষ্টের কথা! যুধিষ্ঠির এই দারুণ সংবাদে মাথায় হাত দিয়া কাঁদিতে লাগিলেন, হস্তিনায় হাহাকার উঠিল। পাণ্ডবদিগের মনে হইল যে, ‘গুরুজনেরা যখন এইরূপে পুড়িয়া মরিলেন, তখন আমাদের রাজ্য, ধর্ম বীরত্ব সকলই বৃথা।’

 নারদ উপদেশ দ্বারা তাঁহাদিগকে শান্ত করিলে, সকলে গঙ্গাতীরে গিয়া ধৃতরাষ্ট্র, গান্ধারী আর কুন্তীর তর্পণ ও শ্রাদ্ধাদি শেষ করিলেন। বনবাসে ধৃতরাষ্ট্র, কুন্তী আর গান্ধারীর তিন বৎসর কাটিয়াছিল।

(ছবি)

উপেন্দ্র—৪৩