পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৬০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ভার দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, 'রাজা, তোমার মুখ যে ভার দেখছি, তোমার কিসের দুঃখ?'

 রাজা বললেন, 'সে কথা আর কি বলব, মুনি-ঠাকুর! আমার রাজ্য, ধন, লোকজন সবই আছে কিন্তু আমার যে ছেলেপিলে নেই, আমি মরলে এসব কে দেখবে?'

 মুনি বললেন, 'এই কথা? আচ্ছ, তোমার কোন চিন্তা নেই। কাল ভোরে উঠেই তুমি সোজাসুজি উত্তর দিকে চলে যাবে। অনেক দূর গিয়ে একটা বনের ধারে দেখবে একটা আমগাছ রয়েছে। সেই আমগাছ থেকে সাতটি আম এনে তোমার সাত রানীকে বেটে খাইয়ে দিলেই, তোমার সাতটি ছেলে হবে। কিন্তু খবরদার, আম নিয়ে আসবার সময় পিছনের দিকে তাকিয়ো না যেন।'

 এই কথা বলে মুনি চলে গেলেন। তারপর দিন গেল, রাত হল, ক্রমে রাত ভোর হল। তখন রাজামশাই তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে সোজাসুজি উত্তর দিকে চলতে লাগলেন। যেতে যেতে অনেক দূর গিয়ে তিনি দেখলেন, সত্যি সত্যি বনের ধারে একটা আমগাছ আছে তাতে পাকা পাকা সাতটি আমও দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। সেই বনে তিনি কতবার শিকার করতে এসেছে, কিন্তু আমগাছ কখনো দেখতে পান নি। যা হোক, তিনি তাড়াতাড়ি সেই গাছে উঠে আম সাতটি পেড়ে নিয়ে বাড়িতে ফিরে চললেন।

 খানিক দূরে যেতে না যেতেই শুনলেন, কে যেন পিছন থেকে তাকে ডাকছে,

ওগো রাজা, ফিরে চাও,
আরো আম নিয়ে যাও।

 মুনি যে সাবধান করে দিয়েছিলেন, সে কথা রাজার মনে ছিল না। তিনি পিছন থেকে ডাক শুনেই ফিরে তাকিয়েছে, আর অমনি আমগুলো তাঁর হাত থেকে ছুটে গিয়ে আবার গাছে ঝুলতে লেগেছে। কাজেই রাজামশাই-এর আবার গিয়ে গাছে উঠে আমগুলি পেড়ে আনতে হল। এবার আর তিনি কিছুতেই মুনির কথা ভুললেন না। তিনি চলে আসবার সময় পিছন থেকে তাকে কতরকম করে ডাকতে লাগল, ‘চোর’ ‘চোর’ বলে কত গালও দিল। রাজামশাই তাতে কান না দিয়ে বোঁ বোঁ করে বাড়ি পানে ছুটলেন।

 বাড়ি এসে রানীদের হাতে সাতটি আম দিয়ে রাজামশাই বললেন, 'তোমরা সাতজনে এই সাতটি আম বেটে খাও।'

 মেটরানী তখন সেখানে ছিলেন না। বড় রানীরা দুজনে মিলে তাকে কিছু না বলেই সব কটি আম খেয়ে ফেললেন। টেরানী এর কিছুই জানতে পারলেন না, কিন্তু তার কি সব দেখল। বড় রানীদের খাওয়া হয়ে গেলে সে আমের ছলগুলি চুপিচুপি কুড়িয়ে নিয়ে গেল। সেই হলগুলো ধুয়ে বেটে ছোটরানীর হাতে দিয়ে বলল, মা, এই ওষুধটা খাও, তোমার ভাল হবে। ওষুধ খেতে হয়, তাই ছোটরানী আর কোন কথা না বলেই সেটা খেয়ে ফেললেন।

 তারপর বড় রানীদের সকলেরই এক-একটি সুন্দর থোকা হল, রাজা তাতে খুশি হয়ে ধুমধাম আর গানবাজনা করালেন। ছোটরানীরও একটি খোকা হল, কিন্তু সেটি হল বানর। বানর দেখে রাজা চটে গিয়ে ছোটরানীকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলেন। দেশের লোকের তাতে বড়ই দুঃখ হল। তারা একটি কুঁড়ে বেঁধে টেরানীকে বলল, মা, তুমি এইখানে থাকো।