পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৩৬১

 সেইখানে ছোটরানী থাকেন। বানরটি সেখানে থেকে দিন দিন বড় হচ্ছে। সে মানুষের মত কথা কয়। আর তার এমনি বুদ্ধি যে, কোন কথা তাকে শিখিয়ে দিতে হয় না। যখন যে কাজের দরকার, অমনি সে তা করে। সারাদিন সে গাছে গাছে ঘুরে বেড়ায়, যেখানে যে ফল দেখে তা খায়; খুব ভাল লাগলে মার জন্যে নিয়ে আসে। তাকে কেউ কিছু বলে না, কারুর গাছের ফল খেতে গেলে সে ভারি খুশি হয়ে ভাল ভাল ফল দেখিয়ে দেয়। তার বুদ্ধি দেখে সকলে আশ্চর্য হয়ে যায়!

 এমনি করে দিন যাচ্ছে। বড় রাণীদের ছটি ছেলেও এখন বড় হয়েছে। তারা বানরটিকে যার পর নাই হিংসা করে, সে তাদের সঙ্গে খেলা করতে গেলে তাকে মেরে তাড়িয়ে দেয়।

 তারপর একদিন বানরটি দেখল, যে বড় রানীদের ছেলেদের জন্য মাস্টার এসেছে, তারা পুঁথি নিয়ে তার কাছে বসে পড়ে। তা দেখে বানর গিয়ে তার মাকে বলল, “মা, আমাকে পুঁথি এনে দাও, আমি পড়ব।'

 মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, 'হায় বাছা, কি করে পড়বে? তুমি যে বানর।'

 বানর বলল, 'সত্যি মা, আমি পড়ব; তুমি বই এনে দিয়েই দেখো। তুমি আমাকে পড়াবে।'

 বানরের এমনি বুদ্ধি, যে বই পায় সে দুদিনে পড়ে শেষ করে ফেলে। সে দুবছরে মস্ত পণ্ডিত হয়ে উঠল। বড় রানীদের ছেলেরা তখনো দু-তিনখানি বই-পুঁথি শেষ করতে পারে নি; রোজ খালি মাস্টারের বকুনি খায়।

 এ-সব কথা শুনে রাজা একদিন বললেন, 'বটে? বানরের এমনি বুদ্ধি? নিয়ে এসো ত তাকে, আমি দেখব।'

 বানরের কিছুতেই ভয় নেই, রাজা ডেকেছে শুনে সে অমনি তার কাছে উপস্থিত হল। তাকে দেখে আর তার কথাবার্তা শুনে রাজার এমনি ভাল লাগল যে, তিনি আর কিছুতেই ছোটরানীকে কুঁড়েঘরে ফেলে রাখতে পারলেন না। বাড়িতে আনতেও ভরসা পেলেন না, পাছে বড় রানীরা কিছু বলেন। তাই তিনি ছোটরানীকে রাজবাড়ির পাশেই একটি খুব সুন্দর বাড়ি করে দিলেন। সেই বাড়িতে তখন থেকে ছোটরানী তার বানর নিয়ে থাকেন। টাকা- কড়ি যত লাগে রাজার লোক এসে দিয়ে যায়। লোকে তাঁর বাড়িটাকে বলে বানরের বাড়ি। এ-সব দেখে বড় রানীদের ছেলেরা বানরকে আরো বেশি হিংসা করতে লাগল।

 একটু একটু করে ছেলেরা বড় হয়ে উঠল। সকলে রাজাকে বলল, 'রাজপুত্রেরা বড় হয়েছে, এখন এঁদের বিয়ে দিন।'

 রাজা বললেন, 'তাদের দেশ বিদেশ ঘুরতে দাও। তারা নানান জায়গা দেখে, নানানরকম শিখে টুকটুকে ছয়টি রাজকন্যা বিয়ে করে আনুক।'

 সকলে বলল, 'বেশ বেশ! তাই হোক।'

 তারপর ছয় রাজপুত্র সেজেগুজে, টাকাকড়ি সঙ্গে নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে নানান দেশ দেখতে বেরুল। তা দেখে বানর তার মাকে গিয়ে বলল, 'মা, আমিও যাব।'

 তার মা বললেন, তুমি কি করতে যাব জাদু, তোমাকে কোন্ টুকটুকে রাজকনা বিয়ে করবে?'

 মা বললেন, 'তুমি যে দেশ দেখতে যাবে, আমি তোমাকে ছেড়ে কি করে থাকব?

উপেন্দ্র-৪৬