পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৩৬৫

পাকা ফলার

 পাড়াগাঁয়ে এক ফলারে বামুন ছিল। তাহাকে যাহারা নিমন্ত্রণ করিত, তাহারা সকলেই খুব গরিব; দৈ-চিঁড়ের বেশি কিছু খাইতে দিবার ক্ষমতা তাহাদের ছিল না।

 ব্রাহ্মণ শুনিয়াছিল দৈ-চিঁড়ের ফলারের চাইতে পাকা ফলারটা ঢের ভাল। সুতরাং এরপর যে ফলারের নিমন্ত্রণ করিতে আসিল, তাহাকে সে বলিল, ‘পাকা ফলার খাওয়াতে হবে।’ সে বেচারা গরিব লোক, পাকা ফলার সে কোথা হইতে দিবে? তাই সে বিনয় করিয়া বলিল, ‘মশাই, পাকা ফলার দেওয়া কি যার তার কাজ? রাজা রাজড়া হলে তবে পাকা ফলার দিতে পারে।’ এ কথা শুনিয়া ব্রাহ্মণ বলিল, ‘তবে, রাজা যেখানে থাকে, সেইখানে গিয়ে আমি পাকা ফলার খাব।’

 ব্রাহ্মণ পাকা ফলার খাইবার জন্য রাজার বাড়ি চলিয়াছে। পথে যাহাকে দেখে, তাকেই জিজ্ঞাসা করে, ‘হ্যাঁগা, রাজার বাড়িটা কোন্‌খানটায়?’ একজন তাহাকে রাজার বাড়ি দেখাইয়া বলিল, ‘ঐ যে পাকা বাড়ি দেখছ, ঐটে রাজার বাড়ি।’

 ব্রাহ্মণ ‘পাকা ফলার’ যেমন খাইয়াছে, ‘পাকা বাড়ি’ও তেমনি দেখিয়াছে। সুতরাং পাকা বাড়ির কথা শুনিয়া সে ভারি আশ্চর্য হইয়া রাজার বাড়ির দিকে তাকাইল। সে দেশের সব লোকেই কুঁড়েঘর;খালি রাজার একটি সুন্দর পাকা বাড়ি ছিল। রাজার বাড়ি দেখিয়া ব্রাহ্মণের মুখে লাল পড়িতে লাগিল। সে গদগদ স্বরে বলিল, ‘পাকা বাড়ি! আহা! পাকা বাড়িই বটে! হবে না কেন? সে যে রাজা, তাই সে অমন বাড়িতে থাকে। ওটা তয়ের করতে না জানি কত ক্ষীর, ছানা আর চিনি লেগেছিল!’

 এ মনে করিয়া ব্রাহ্মণ তাড়াতাড়ি গিয়া রাজার বাড়ির একটা কোণ কামড়াইয়া ধরিল; আবার তখনই ‘উঃ-হুঃ-হুঃ’ করিয়া কামড় ছাড়িয়া দিল।

 তারপর সে ভাবিতে লাগিল, ‘তাই ত, এই পাকা ফলারের এত নাম!’ আর খানিক ভাবিয়া সে বলিল, ‘ওঃ হো! বুঝেছি। নারকেলের মতন আর কি! ওটা ওর খোলা; আসল জিনিসটা ভিতরে আছে!’ এই বলিয়া সে আগের চাইতে দ্বিগুণ উৎসাহে কামড়াইতে আরম্ভ করিল। তাহার দুইটা দাঁত ভাঙিয়া গিল, তাহাতে গ্রাহ্য নাই। কামড়াইতে কামড়াইতে সে সেই কোণের অনেকখানি ভাঙিয়া ফেলিয়াছে, আর মনে করিতেছে যে, ‘আর বেশি দেরি নেই এরপরই পাকা ফলার আসবে!’ এমন সময় কোথা হইতে মস্ত পাগড়িওয়ালা এক দরোয়ান আসিয়া তাহাকে ধরিয়া ফেলিল। ‘আরে ঠাকুর, ক্যা করতে হো? মহারাজকে ইমারত খা ডল্‌তে হো? চলো তুম হমারে সাথ।’ এই বলিয়া দরোয়ান তাহাকে রাজার নিকট লইয়া চলিল।

 দরোয়ানের কাছে সকল কথা শুনিয়া রাজা বলিলেন, ‘কি ঠাকুর, ওখানে কি করছিলে?’ ব্রাহ্মণ উত্তর করিল, ‘মহারাজ! আমি পাকা ফলার খাচ্ছিলুম। খোলাটা না ভাঙতে ভাঙতেই এই বেটা দবোয়ান আমাকে ধরে এনেছে!’

 এই কথা শুনিয়া রাজামহাশয় হো-হো করিয়া হাসিতে লাগিলেন, আর বেশ বুঝিতে