পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৩৬৭

দিত!’

 এমন সময় হইয়াছে কি, রাজার প্রধান ভাণ্ডারী সেই রাস্তা দিয়া চলিয়াছে সে নিজের হাতে সেদিন সকাল বেলায় ঐ ফলারে বামুনের জন্য পুরো দু সের ময়দা আর তাহার মতন অন্য সব জিনিস মাপিয়া দিয়াছে। ফলারে বামুনের মুখে ঐ কথা শুনিয়া সে জিজ্ঞাসা করিল, ‘কি ঠাকুরমশাই! কি যদি আর খানকতক দিত?’ ফলারে বামুন বলিল, ‘বাবা আমি পাকা ফলারের কথা বলছি। রাজামশাই চিরজীবী হউন, আমাকে এমন জিনিস খাইয়েছেন! খালি যদি আর খানকতক হত!’

 ভাণ্ডারী জিজ্ঞাসা করিল, ‘আপনাকে কখানা দিয়েছিল?’ ফলারে বামুন বলিল, ‘চারখানি পাকা ফলার আমাকে দিয়েছিল।’ ভাণ্ডারী সবই বুঝিতে পারিয়া বলিল, ‘সে কি ঠাকুরমশাই! দু সের ময়দা দিয়েছি, তাতে কি মোটে চারখানা লুচি হয়!’ ব্রাহ্মণ বলিল, ‘হ্যাঁ বাপু, চারখানাই ছিল। আর তাতে খুব চমৎকার লেগেছিল।’ ভাণ্ডারী বলিল, ‘দু সের ময়দায় তার চেয়ে ঢের বেশি লুচি হয়। আমার বোধ হচ্ছে, ঐ রসুয়ে বামুনের ছেলেটা বাকি লুচিগুলো মাচায় তুলে রেখেছে। আপনি আবার যান। এবারে গিয়ে একেবারে মাচায় উঠবেন;দেখবেন আপনার লুচি সেখানে আছে।’ ব্রাহ্মণ বলিল, ‘তাই নাকি? বাপু তুমি বেঁচে থাকো। হতভাগা, বেল্লিক, বাঁদর, শয়তান পাজি’— বলিতে বলিতে ব্রাহ্মণ সেই রসুয়ে বামুনের বাড়ির পানে ছুটিল। গালিগুলি অবশ্য ভাণ্ডারীকে দেয় নাই।—রসুয়ে বামুনের ছেলেকে দিয়াছিল।

 রসুয়ে বামুনের ছেলে ফলারে বামুনকে চারিখানি লুচি খাওয়াইয়া বিদায় করিয়াই, তাহার সেই চোর বন্ধুর কাছে গিয়াছিল। সেখানে গিয়া সে চোরকে বলিল, বন্ধু, ঢের লুচি তয়ের ক’রে মাচার উপর রেখে এসেছি। তুমি শিগগির যাও; আমিও এই বাজার থেকে একটা জিনিস নিয়ে এখনি আসছি।’

 চোর রসুয়ে বামুনের মাচার উপর উঠিয়া সবে লুচির ঢাকনা খুলিতে যাইবে, এমন সময় ফলারে বামুন আসিয়া উপস্থিত। এবারে কথাবার্তা নাই, একেবারে মাচায় গিয়া উঠিল। চোর মুশকিলে পড়িল। লুকাইবারও স্থান নাই, পালাইবারও পথ নাই। এখন সে যায় কোথায়? শেষটা আর কি করে, মাচার কোণে একটা কাঠের থাম জড়াইয়া কোনরকমে বেমালুম হইয়া থাকিতে চেষ্টা করিতে লাগিল। একে সন্ধ্যাকাল, তাহাতে আবার ফলারে বামুন নিতান্তই সাদাসিধে লোক, লুচি খাইবার জন্য তাহার মনটা যারপর নাই ব্যস্ত রহিয়াছে। সুতরাং চোরকে সে দেখিতে পাইল না। ফলারে বামুন সামনে লুচি, সন্দেশ, তরকারি মিঠাই সাজানো দেখিয়াই খাইতে বসিয়া গেল। পেটে যত ধরিল, তত সে খাইল;আর একটি হজমি গুলির স্থানও নাই।

 এমন সময়ে ভারি একটা মজা হইল। রসুয়ে বামুনের ছেলেও বাজার হইতে ফিরিয়া আসিয়াছে আর ঠিক সেই সময় রসুয়ে বামুনও আসিয়াছে। অন্যদিন সে প্রায় দুপুর রাত্রের পূর্বে ফিরে না, কিন্তু সেদিন সে ভুলিয়া একটা ঝাঁজরা ফেলিয়া গিয়াছিল, সেটার ভারি দরকার। ছেলে আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘বাবা, তুমি এখনি ফিরে এলে যে?’ রসুয়ে বামুন বলিল, ‘ঝাঁজরা ফেলে গিয়েছিলুম, তাই নিতে এসেছি।’

 এতক্ষণে ফলারে বামুনের পেট এত বোঝাই হইয়াছে যে, আর-একটু হইলেই তাহার দম আটকায়। পিপাসায় গলা শুকাইয়া গিয়াছে, কিন্তু সেখানে জল নাই। সে ‘জল জল’ বলিয়া