পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৩৯৫

 কেনা। এই বেয়ালা ধরছি।

 বেচা। না না— আমি, হুজুর আমি— কাল রাত্তিরে হুজুর, চুরি করেছিলাম। দোহাই হুজুর।

 কেনা। ধর্মের ঢাক আপনি বাজে। দেখলেন ত বেচুবাবু?

 বিচারক। একে পঁচিশ বেত মারো।

ঝানু চোর চানু

 ছেলেবেলা থেকেই চানু শয়তানের একশেষ, আশপাশের লোকজন তার জ্বালায় অস্থির। চানুর বাবা বড় গরিব ছিল, চানু ভাবল—বিদেশে গিয়ে টাকা পয়সা রোজগার করে আনবে। যেমন ভাবা তেমনি কাজ, একদিন সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। খানিক দূর গিয়েই বনের ভিতর দিয়ে একটা নির্জন রাস্তা—চানু সেই রাস্তা ধরে চলল। সমস্ত দিন বৃষ্টিতে ভিজে শ্রান্ত ক্লান্ত হয়ে সন্ধ্যার সময় পথের ধারেই একটি কুঁড়েঘর ছিল, সেখানে এসে উপস্থিত।

 ঘরের ভিতরে আগুনের পাশে একটি বুড়ি বসেছিল, চানুকে দেখে জিজ্ঞাসা করল, ‘কি চাই বাপু তোমার?’

 চানু বলল, ‘চাইব আর কি, কিছু খাবার দাবার চাই, আর একটি বিছানা চাই।’

 বুড়ি বলল, ‘সবে পড় বাপু, এখানে কিছু পাবে না। আমার ছয়টি ছেলে, সারা দিন খেটেখুটে তারা এখনই বাড়ি ফিরবে। তোমাকে এখানে দেখতে পেলে তারা তোমার গায়ের চামড়া তুলে ফেলবে।’

 চানু। সেটা আর বেশি কথা কি? এই ঠাণ্ডায় বাইরে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে মরার চাইতে গায়ের চামড়া তুলে ফেলবে সেইটাই বরং ভাল।

 বুড়ি দেখল সে সহজ লোকের পাল্লায় পড়ে নি; কি আর কবে, তখন চানুকে পেট ভরে খেতে দিল। শুতে যাবার সময় চানু বুড়িকে বলল, ‘দেখো বুড়ি! তোমার ছেলেরা এসে যদি আমার ঘুম ভাঙায় তা হলে কিন্তু বড় মুশকিল হবে বলছি।’

 পরের দিন ঘুম ভাঙলে চানু দেখল ছয় জন অতি বদ-চেহারার লোক তার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে—সে তাদের দেখে গ্রাহ্যও করল না।

 দলের সর্দারটি তখন চানুকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তুমি কে হে বাপু? কি চাও এখানে?’

 চানু। ‘আমার নাম সর্দার চোর, আমার দলের জন্য লোক খুঁজে বেড়াচ্ছি। তোমরা যদি চালাক চতুর হও তা হলে তোমাদের অনেক বিদ্যে শিখিয়ে দেব।’

 সর্দার বলল, ‘আচ্ছা বেশ, তুমি তা হলে এখন উঠে একটু খাও-দাও, তারপরে দেখা যাবে এখন কে সর্দার।’

 বিছানা থেকে উঠে সকলের সঙ্গে বসে চানু খেল। ঠিক তারপরই সকলে দেখল একটা সুন্দর ছাগল সঙ্গে নিয়ে একজন কৃষক বনের পাশে যাচ্ছে। তখন চানু বলল, ‘আচ্ছা তোমাদের কেউ কোনরকম জবরদস্তি না করে শুধু ফাঁকি দিয়ে ঐ লোকটার ছাগলটা নিয়ে আসতে পার?’ একজন একজন করে সকলেই বলল, ‘না ভাই, আমরা কেউ তা পারব না।’