পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৯৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

বাড়ির দরজায়ই বসে ছিল, তারপর সেই হারানো জন্তুগুলিকে দেখে আহ্লাদে লাফিয়ে উঠল।

 চানু বল, ‘জন্তুগুলো কার বলতে পার কি?’

 ‘এগুলো যে আমাদের আপনি কোথায় পেলেন মশায়?’

 ‘এই বনের ভিতর চরে বেড়াচ্ছিল। আচ্ছা, ছাগলটার গলায় একটা থলে ঝুলছে, তাতে দশটা মোহর রয়েছে-ওগুলিও কি তোমাদের?’

 ‘না মশায়। আমরা গরিব দুঃখী লোক, মোহর কোথা পাব?’

 ‘আচ্ছা, মোহরগুলোও তোমরা নাও, আমার কিছু দরকার নেই।’ মোহরগুলি নিয়ে দুইহাত তুলে কৃষক চানুকে আশীর্বাদ করল।

 সমস্ত দিন চলে চানু প্রায় সন্ধ্যার সময় তার বাড়িতে এসে উপস্থিত, বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখল তার মা-বাবা বসে আছেন। চানু বলল, ‘ভগবান আপনাদের ভাল করুন, আজ রাতটা আপনাদের বাড়িতে থাকতে পারি কি?’

 ‘আপনার মত ভদ্রলোক কি এখানে থাকতে পারবেন? আমরা যে বড় গরীব।’

 চানু আর চুপ থাকতে পারল না, ‘বাবা, তুমি কি তোমার ছেলেকেও চিনতে পারছ না?’

 চানুর মা বাবা খানিকক্ষণ অবাক হয়ে রইল, তারপর চানুকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘এমন সুন্দর পোশাক তুমি কোথা পেলে বাবা?’

 চানু। ‘পোশাক দেখেই অবাক হয়ে গেলে, তা হলে এই টাকাগুলো দেখে কি করবে?’ এই বলে চানু পকেট খালি করে সব মোহর টেবিলের উপর রাখল।

 এতগুলো মোহর দেখে চানুর বাবার বড্ড ভয় হল। চানু তখন সব কথা খুলে বলল— তার আশ্চর্য বুদ্ধির কথা শুনে চানুর মা বাপের আনন্দ আর ধরে না।

 পরের দিন সকালে চানু বাবাকে বলল, ‘বাবা, যাও জমিদারবাড়ি। বলো গিয়ে আমি তাঁর মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।’

 চানুর কথা শুনে তার বাবার চোখ বড় হয়ে গেল, ‘বলিস কিরে বেটা। তা হলে যে আমার পিছনে কুকুর লেলিয়ে দেবে।’

 ‘না! তুমি বোলো যে আমি সর্দার চোর, আমার মত ঝানু চোর দুনিয়ায় নেই, জবরদস্ত ও ওস্তাদ চোরদের ফাঁকি দিয়ে লাখ টাকা রোজগার করে এনেছি। দেখো বাবা, যখন দেখবে জমিদারের মেয়েও সেখানে আছে তখনই এ-সব কথা বোলো।’

 ‘আচ্ছ, এত করে যখন বলছ যাচ্ছি, কিন্তু কিছু হবে বলে মনে হয় না।’ প্রায় দুই ঘণ্টা পরে চানুর বাবা ফিরে এল। চানু বলল, ‘কি করে এলে বাবা?’

 ‘নেহাত মন্দ নয়। মেয়েটি যে বড় অনিচ্ছুক তা ত মনে হল না, বোধকরি বাবাজি তুমি এর আগেও তার কাছে এ প্রস্তাবটি করেছ—না? যা হোক, জমিদারমশায় বললেন আসছে রবিবারে তাঁরা নাকি একটি হাঁস ভেজে খাবেন, তুমি যদি কড়া থেকে হাঁসটা বেমালুম চুরি করতে পার, তা হলে তিনি তোমার কথা ভেবে দেখবেন।’

 ‘এ আর তেমন শক্ত কাজ কি? দেখা যাবে এখন।’

 রবিবার দিন জমিদার এবং বাড়ির সকলে রান্নাঘরে রয়েছেন—হাঁস ভাজা হচ্ছে, এমন সময় রান্নাঘরের দরজা খুলে গেল। একটা অতি কুৎসিত বুড়ো ভিখারি, পিঠে তার একটা