পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 বুড়ো আস্তাবলের দরজায় উঁকি মেরে বলল, ‘লক্ষী বাপ আমার, বুড়ো মানুষ শীতে মরে গেলাম, ঐ কোণটাতে একটু জায়গা দাও, একমুঠো খড় নিয়ে পড়ে থাকব এখন।’

 সহিসরা ভাবল, এলই বা বুড়ো, বেচারি শীতে জমাট বেঁধে গেল—‘ও ত আর কোনো অনিষ্ট করবে না।’ আস্তাবলের কোণে খড় পেতে বুড়ো বেশ আরামে বসল। সহিসেরা দেখল বুড়ো খানিক পরেই একটা কালো বোতল বের করে একটু মদ খেল-তার মুখে আর হাসি ধরে না, যেন সে খুবই আরাম বোধ করেছে! সহিসদের বুড়ো বলল, ‘বাবা, তোমাদের সব বোধ করি শেষ করে ফেলেছ, তা আমার কাছে ঢের আছে। তবে কিনা তোমরা পাছে কিছু মনে কর তাই তোমাদের দিতে ভরসা পাচ্ছি না।’ একে বজায় শীত, তার উপরে সত্যি সতাি তাদের মদ শেষ হয়ে গেছে, বুড়োর কথা শুনে সহিসরা যেন হাতে চাঁদ পেল—‘সে কি দাদু, তুমি যদি দাও তা হলে ত বেঁচে যাই—ঠাণ্ডায় মরে গেলাম।’

 বুড়ির বোতলটি দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেল, তবুও সহিসদের শীত গেল না। শয়তান বুড়ো তখন আর একটি বোতল বের করে তাদের দিল। এ বোতলটার মদের সঙ্গে কি মেশানো ছিল, খাওয়া মাত্র সব কটা সহিস ঘোড়ার পিঠে গদির উপরে বসেই নাক ডাকিয়ে ঘুম দিল।

 তখন বুড়ো উঠে সবকটা সহিসকে খড়ের উপর শুইয়ে ঘোড়াগুলোর পায়ে মোজা পরিয়ে দিল। তারপর সবগুলিকে নিয়ে একেবারে চানুদের বাইবের একটা ঘরে গিয়ে হাজির।

 পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জমিদারমশায় প্রথমেই কি দেখলেন? তাঁর বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়েই চানু ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছে আর তার ঘোড়ার পিছনে পিছনে অপর পাঁচটা ঘোড়াও চলেছে।

 জমিদারমশায় অবাক হয়ে রইলেন, মনে মনে বললেন, ‘গোল্লায় যা তুই চানু, আর যাদের চোখে ধুলো দিয়েছিল সে বেচারারাও গোল্লায় যাক।’ আস্তাবলে গিয়ে সহিস বেটাদের জাগাতে জমিদারমশায়কে বেগ পেতে হয়েছিল।

 সকালবেলা জমিদারমশায় খেতে বসেছেন, চানুকেও ডেকে এনেছেন, খেতে খেতে চানুকে বললেন, ‘কতকগুলো বোকা পাঁঠার চোখে ধুলো দিয়েছ। এতে তেমন বাহাদুরি নেই। আচ্ছা, আজ বেলা একটা থেকে তিনটে পর্যন্ত আমি ঘোড়ায় চড়ে বাড়ির সামনে ঘুরে বেড়াব, নিও দেখি বাপু আমার ঘোড়াটা চুরি করে! তা হলে বুঝব তুমি বাহাদুর এবং আমার জামাই হবার উপযুক্ত।’

 চানু মাথা নিচু করে উত্তর করল, ‘যে আজ্ঞে, একবার চেষ্টা করে দেখব এখন।’

 একটার পর থেকে জমিদার ঘোড়ায় চড়ে পাইচারি করে করে একেবারে কাহিল হয়ে পড়লেন, তিনটে বেজে গেল, চানুর টিকিটিও দেখতে পেলেন না। মনে করলেন এবারে বাড়ি ফিরে যাবেন, এমন সময় তাঁর একটা চাকর পাগলের মত উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে এসে হাজির—‘কর্তা শিগ্‌গির বাড়ি যান, মা ঠাকরুনকে বুঝি বা আর দেখতে পেলেন না;সিঁড়ির উপর থেকে তিনি পড়ে গেছেন। বোধ করি হাত-পা সব ভেঙে গেছে, তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছেন। আমি চললাম ডাক্তারের বাড়ি।’

 জমিদারের চোখ বড় হয়ে গেল, ‘বলিস কিরে বেটা, কি সর্বনাশ। ডাক্তারের বাড়ি যে