পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 রুরুকে দেখেই ররঙ্গার যার পর নাই ভাল লেগেছিল, তার কথা শুনে তার বড়ই দুঃখ হল। সে বুঝতে পারল যে রুকর দাদারা বড় দুষ্টু, তাকে কষ্ট দেয়। তখন রুরুকে তার আরো ভাল লাগল। দুদিন পরে তাদের বিয়েও হয়ে গেল।

 তার পরদিন রুরুর দাদারা বউ নিয়ে ঘরে যাবে। রুরু যে তার আগেই ররঙ্গাকে নিয়ে নৌকার তলায় লুকিয়ে রেখেছে, সে কথা তাদের কেউ টের পায় নি। তারা ভারি ধুমধাম করে দেশে এল। তারপর বউ নিয়ে বাড়িতে পা দিয়েই সকলের বড় ভাই তাদের মাকে বলল, ‘এই দেখ মা, ররঙ্গাকে বিয়ে করে এনেছি।’ অমনি তার ছোটভাই তার চেয়ে বেশি করে চেঁচিয়ে বলল, ‘না মা, ও মিছে কথা বলছে, আমি ররঙ্গাকে এনেছি।’

 তখন ত ভারি মজা হল। সবাই বলছে, ‘ওদের কথা মিথ্যে, আমি ররঙ্গাকে এনেছি।’

 ভয়ানক চটাচটি, মারামারি হয় হয়। বউ কটি থতমত খেয়ে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে, তারা ভাবেনি যে অত সহজে ধরা পড়ে যাবে।

 তখন মা বললেন, ‘বাবা, ররঙ্গা ত ছটি নয়, আর এদের একটিও তেমন সুন্দরী নয়। তোমরা ঠকে এসেছ।’ রুরু এতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়েছিল, মার কথা শুনে সে বলল, ‘ঠিক বলেছ মা, ঠকে এসেছে। আমার সঙ্গে এসো, আমি ররঙ্গাকে দেখিয়ে দিচ্ছি।’

 এ কথায় রুরুর দাদারা ত হেসেই গড়াগড়ি দিতে লাগল; কিন্তু মা বললেন, ‘আচ্ছা গিয়েই দেখি না।’ বলেই তিনি রুরুর সঙ্গে নৌকোয় এলেন, আব একটিবার ররঙ্গার মুখের দিকে চেয়েই তাকে কোলে নিয়ে আনন্দে নাচতে লাগলেন। সে খবর দেখতে দেখতে গ্রামময় ছেয়ে ফেলল। তখন পাড়ার ছেলে বুড়ো, গিন্নি বউ সকলে ছুটে এসে ররঙ্গাকে ঘিরে নাচতে লাগল।

 এ-সব দেখে দাদারা চোখ লাল করে, দাঁত খিচিয়ে তাদের স্ত্রীদের বলল, ‘বটে? ফাঁকি দিয়েছিস?’ শুনে সকলে হো হো করে হাসল। তাদের মা বললেন, ‘আর কেন বাছা চুপ করো! তোমরা যেমন, তোমাদের তেমনি জুটেছে।’


কাজির বিচার

 রামকানাই ভাল মানুষ-নেহাত গোবেচারা। কিন্তু ঝুটারাম লোকটি বেজায় ফন্দিবাজ। দুজনেই দেখা শোনা আলাপ-সালাপ হল। ঝুটারাম বললে, ‘ভাই, দুজনেই বোঝা বয়ে খামকা কষ্ট পাই কেন? এই নাও, আমার পুঁটলিটাও তোমায় দিই— এখন তুমি সব বয়ে নাও—ফিরবার সময় আমি বইব।’ রামকানাই ভালমানুষের মত দুজনের বোঝা ঘাড়ে বয়ে চলল।

 গ্রামের কাছে এসে তাদের খুব খিদে পেয়েছে, রামকানাই বলল, ‘এখন খাওযা যাক— কী বল?’ ঝুটারাম বলল, ‘ভাই তোমার বাড়ি কে কে আছে?’ রামকানাই তার বাবা, মা, ভাই, বোন, স্ত্রী, ছেলেপিলে সকলের কথা বলতে লাগল—তার মেয়ে কত বড় হয়েছে—তার ছেলে কি করে—সব কথা বলল। রামকানাই যত কথা বলে, ঝুটারাম ততই আরো প্রশ্ন করে, আর গপাগপ ভাত মুখে দেয়। রামকানাই গল্পেই মত্ত, তার যখন হুঁশ হল–