পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সে সেখানে পথের পাশে একটু না বসে আর কি করে?

 কতক্ষণ সে এভাবে বসে ছিল তার কিন্তু ঠিক নেই। বসে থাকতে থাকতে তার মনে হল যেন সেই পুরনো বাড়িটার ভিতর থেকে আওয়াজ আসছে। অনেকগুলো গলা মিলে, আহা, কি সুন্দর সুরেই গাইছে। শুনে কানাইয়ের প্রাণ জুড়িয়ে গেল। সে অবাক হয়ে খালি শুনতেই লাগল। গানের সুরটি অতি আশ্চর্য কিন্তু কথা খালি এইটুকু

‘লুন হ্যায়, তেল হ্যায়, ইম্‌লী হ্যায়, হিং হ্যায়!’

 শুনতে শুনতে কানাই একেবারে মেতে গেল, সে ভাবল যে তারও গানটা না গাইলেই চলছে না। কাজেই সেও খুব করে গলা ছেড়ে সঙ্গে সঙ্গে ধরল

‘লুন হ্যায়, তেল হ্যায়, ইম্‌লী হ্যায়, হিং হ্যায়।

 এইটুকু গেয়েই ঝাঁ করে তার বুদ্ধি খুলে গেল, সে আরো উঁচু সুরে গাইলঃ লসুন হ্যায়, মরীচ হ্যায়, চ্যাং ব্যাং শুঁট্‌কি হ্যায়।’

 কানাই এই কথাগুলো খুব গলা ছেড়েই গেয়েছিল—সে গলার আওয়াজ যে সেই বাড়ির ভিতরের গাইয়েদের কানে গিয়ে পৌঁছিয়েছিল, তাতে আর কোন ভুল নেই। সে গাইয়েগুলো ছিল অবশ্য ভূত। তারা সেই নূতন কথাগুলো শুনে এতই খুশি হইল যে, তখনই ছুটে কানাইয়ের কাছে না এসে আর থাকতে পারল না। তারা এসে কানাইকে কোলে করে নাচতে নাচতে সেই বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেল, আর আদরটা যে করল! মিঠাই যে তাকে কত খাওয়াল, তার অন্ত নেই। তারপর সকলে মিলে নেচে নেচে ঘুরে ঘুরে গাইতে লাগলঃ

‘লুন হ্যায়, তেল হ্যায়, ইম্‌লী হ্যায়, হিং হ্যায়।
লসুন হ্যায়, মরীচ হ্যায়, চ্যাং ব্যাং শুঁট্‌কি হ্যায়।’

 কানাইকেও তাদের সঙ্গে নেচে নেচে গানটি গাইতে হল। তখন হঠাৎ তার মনে হল, কি আশ্চর্য, আমি কুঁজ নিয়ে চলতে পারি না, আমি আবাব নাচলুম কি করে?’ বলতে বলতেই তার হাতখানি পিঠের দিকে গেল—এ কি? তার সে কুঁজ যে আর নেই! একজন ভূত বলল, ‘কি, দেখছিস বাপ? ওটা আর ওখানে নেই, ঐ দেখ, তোর পাশে পড়ে আছে!’

 সত্যি সত্যি সে কুঁজ আর কানাইয়ের পিঠে ছিল না, সেটা তার পাশে পড়ে ছিল। আহা! কানাইয়ের তখন কি আনন্দই হল! হালকা আর আরাম বোধ হল এমনি, যে সে তখনই সেইখানে মেঝেতে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল তারপর যখন পরদিন সকালে তার ঘুম ভাঙ্গল, তখন সে দেখল যে সেই বাড়ির বাইরে রাস্তার ধারে শুয়ে আছে ভুতেরা তাকে একটি চমৎকার নতুন পোশাক পরিয়ে সেখানে এনে রেখে গিয়েছে। তখন সে তাড়াতাড়ি উঠে, মনের সুখে বাড়ি চলে এল। সেখানকার লোকেরা তার মুখের পানে ফ্যালফ্যাল করে তাকায়, কেউ তাকে চিনতে পারে না। সে যে তাদের সেই কুঁজো কানাই, ভূতেরা তার কুঁজ ফেলে তার এমনি সুন্দর চেহারা করে দিয়েছে, এ কথা তাদের বোঝাতে তার অনেকক্ষণ লেগেছিল।

 তারপর দেখতে দেখতে কানাইয়ের কুঁজের গল্প দেশময় ছড়িয়ে পড়ল। যে শুনল, সেই ভাবল যে, এমন আশ্চর্য কথা আর কখনো শোনে নি। এখন আর লোকে তাকে দেখে মুখ ফিরিয়ে থাকে না; তাহা হাসতে হাসতে ছুটে এসে তার সঙ্গে কথা কয়, আর বাড়ির লোককে তার এই আশ্চর্য খবর শোনাবার জন্য তাকে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে যায়। কত লোকে