পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪১১

শুধু সেই গল্প শোেনবার জন্যই তার ঝুড়ি কিনতে আসে। ঝুড়ি বেচে সে বড়লোক হয়ে গেল।

 এমনি করে দিন যাচ্ছে। তারপর একদিন কানাই তার ঘরের দাওয়ায় বসে ঝুড়ি বুনছে, এমন সময় একটি বুড়ি সেই পথে এসে তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘হ্যাঁগা, কেবলহাটি যাব কোন্ পথে?’ কানাই বললে, ‘এই ত কেবলহাটি তুমি কি চাও?’ বুড়ি বলল, ‘তোমাদের গ্রামে নাকি কানাই বলে কে আছে ভূতেরা তার কুঁজ সারিয়ে দিয়েছিল। তার মন্তরটা তার কাছে থেকে শিখে নিতে পারলে আমাদের মানিকের কুঁজটাও সারিয়ে নিতুম।’

 কানাই বলল, ‘আমিই ত সেই কানাই, ভূতেরা আমারই কুঁজ সারিয়ে দিয়েছিল। এর ত মন্তর-টন্তর কিছু নেই, তারা রাত জেগে গাইছিল, আমি পথেব ধারে শুয়ে শুয়ে তাদের গানে নতুন কথা জুড়ে দিয়েছিলাম, তাইতে তারা খুশি হয়ে আমার কুঁজ সারিয়ে, নতুন পোশাক পরিয়ে দিয়েছিল।’ বুড়ি তখন খুঁটে খুঁটে সব কথা কানাইয়ের কাছে থেকে জেনে নিয়ে তাকে অনেক আশীর্বাদ করে সেখান থেকে চলে গেল।

 সেই বুড়ির ছেলে যে মানিক, তার পিঠে ছিল কানাইয়ের কুঁজের চেয়েও ঢের বড় একটা কুঁজ। লোকটা এমনি দুষ্ট আর হিংসুটে ছিল যে পাড়ার লোকে তার জ্বালায় অস্থির থাকত। সেই মানিকের কুঁজ সাবাবার জন্য তার বাড়ির লোকেরা একদিন রাত্রে তাকে গাড়ি করে এনে ভূতের বাড়ির কাছে রেখে গেল। সেখানে পড়ে পড়ে মানিক ভাবছে ভূতেরা কখন গান ধরবে, আর তাতে সে কথা জুড়ে দেবে, আর তার কুঁজ সেরে যাবে। তারপর যেই ভূতেরা বলেছে;লুন হ্যায়, তেল হ্যায়, ইমলী হ্যায়,’ অমনি মানিক আর তাদের শেষ করতে না দিয়ে চেঁচিয়ে বলল, ‘গুরুচরণ ময়রার দোকানের কাঁচাগোল্লা হ্যায়।’

 তখন গানের তাল ভেঙে ত গেলই, কাঁচাগোল্লার নাম শুনে অনেক ভূতের বমি পর্যন্ত হতে লাগল। ভূতেরা এ-সব জিনিসকে বড্ড ঘৃণা করে, এর নাম অবধি শুনতে পারে না। কাজেই তারা এতে বেজায় চটে দাঁত খিঁচুতে খিঁচুতে এসে বলল, ‘কে রে তুই, অসভ্য বেতালা বেটা, আমাদের গান মাটি করে দিলি? দাঁড়া তোকে দেখাচ্ছি!’ এই বলে তারা কানাইয়ের সেই কুঁজটা এনে মানিকের কুঁজের উপরে বসিয়ে এমনি করে জুড়ে দিল যে আর কিছুতেই তাকে তুলবার জো নেই।

 পরদিন মানিকের বাড়ির লোকেরা এসে তাকে দেখে অবশ্য খুবই আশ্চর্য আর দুঃখিত হল কিন্তু গ্রামের লোকেরা বলল, ‘বেটা যেমন দুষ্টু, তেমনি সাজা হযেছে।’

জাপানী দেবতা

 জাপান দেশে ‘কোজিকী’ বলে একখানা পুরনো পুঁথি আছে। তাতে লেখা আছে যে, পৃথিবীটা যখন হয়েছিল তখন সেটা তেলের মত পাতলা ছিল, আর ফেনার মত সমুদ্রে ভেসে বেড়াত।

 তখন নাকি মোটে তিনটি দেবতা ছিলেন। এই তিনটি মরে গেলে আর দুটি হলেন;তাঁরা মরে গেলে আর দুটি—তাঁরা মারা গেলে আবার দশটি দেবতা হলেন।