পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪১২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 এই দশটি দেবতার একজন ছিলেন ‘ইজানাগী’; তাঁর স্ত্রীর নাম ছিল ‘ইজানামী’।

 অন্য দেবতারা এঁদের দুজনের হাতে একটা শূল দিয়ে বললেন, ‘তোমরা এই তেলের মতন জিনিসটা থেকে পৃথিবী তয়ের করো।’

 ইজানাগী আর ইজানামী বললেন, ‘আচ্ছা।’ বলে তাঁরা সেই শূল দিয়ে সমুদ্রটাকে ঘাঁটতে লাগলেন। তারপর যখন শূল তুললেন, তখন তার মুখ বেয়ে যে জল পড়েছিল, তাই থেকে একটা দ্বীপ হল, তার নাম ‘ওনগরো’। এই ওনগরো দ্বীপে একটি সুন্দর বাড়ি তয়ের করে, তার ভিতরে ইজানাগী আর ইজানামী বাস করতে লাগলেন। সেইখান থেকেই তাঁরা জাপান দেশটাকে গড়েছিলেন। এই দেশকে আমরা বলি ‘জাপান’, কিন্তু সে দেশের লোকেরা বলে ‘নিপ্পান্’ বা ‘দাই-নিপ্পন্।’

 ইজানাগী আর ইজানামীর অনেক ছেলেমেয়ে। তার মধ্যে ‘আগুন-দেবতা’ একজন। এই দেবতার জন্মের সময় ইজানামী মরে গেলেন। তখন মনের দুঃখে ইজানাগী চোখের জল ফেলতে লাগলেন, আর সেই চোখের জল থেকে কান্না-পরীর জন্ম হল। কাঁদতে কাঁদতে শেষে ইজানাগীর রাগ হল। তখন তিনি তলোয়ার দিয়ে আগুন-দেবতার মাথা কেটে ফেললেন, তাতে সেই কাটা দেবতার শবীর আর রক্ত হতে যোলটা দেবতা উঠে দাঁড়াল।

 কিন্তু ইজানাগীর মনের দুঃখ তাতেও ঘুচল না। শেষে তিনি ইজানামীকে খুঁজতে খুঁজতে গিয়ে পাতালে উপস্থিত হলেন—সেই যেখানে মৃত্যুর পরে সকলকেই যেতে হয়। পাতালের ভিতর মস্ত পূরী আছে, সেই পুরীর দরজায় গিয়ে ইজানামীর সঙ্গে তাঁর দেখা হল। ইজানামী তাঁকে বললেন, ‘একটু দাঁড়াও আমি জিজ্ঞাসা করে আসি, তারপর তোমার সঙ্গে যাব।’ এই বলে ইজানামী ভিতরে গেলেন। ইজানাগী খানিক বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন, শেষে ইজানামীর দেরি দেখে তিনিও ভিতরে গেলেন। ভিতরে যেতেই এমনি ভয়ানক গন্ধ এসে তাঁর নাকে লাগল যে কি বলব। এমন ভয়ংকর নোংরা জায়গার কথা কেউ ভাবতেও পারে না; আর সেখানে থেকে থেকে ইজানামীও এমন নোংরা হয়ে গিয়েছেন যে, তাঁর কাছে যাবার সাধ্য নাই। এ-সব দেখে ইজানাগী নাকে হাত দিয়ে সেখান থেকে ছুটে পালালেন। পেয়াদাগুলো তাঁকে পালাতে দেখে ‘ধর ধর’ বলে তাড়া করেছিল, কিন্তু ধরতে পারে নি।

 কি বিষম গন্ধই সে জায়গার ছিল; দেশে ফিরেও ইজানাগীর গা থেকে সে গন্ধ গেল না। গন্ধে অস্থির হয়ে তিনি নদীতে স্নান করতে গেলেন। সেই সময়ে তাঁর কাপড় আর গা থেকে অনেকগুলি দেবতা বেরিয়েছিলেন।

 এঁদের মধ্যে একটি মেয়ে ইজানাগীর বাম চোখ দিয়ে বেরিয়েছিলেন, সেটি এমন সুন্দর যে, তেমন আর কেউ কখনো দেখে নি। সেই মেয়েটির নাম ‘গগন-আলো’, তিনি সূর্যের দেবতা!

 ইজানাগীর ডান চোখ দিয়ে আর একটি সুন্দর দেবতা বেরিয়েছিলেন, সেটির নাম ‘তেজবীর’।

 তখন ইজানাগী তাঁর নিজের গলার হার গগন-আলোর গলায় পরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘মা, তুমি হলে স্বর্গের রাণী।’

 চন্দ্রপতিকে তিনি বললেন, ‘তুমি হলে রাত্রির রাজা।’ আর তেজবীরকে বললেন, ‘তুমি হলে সমুদ্রের রাজা।’ তখন গগন-আলো গিয়ে স্বর্গের রাণী হলেন, চন্দ্রপতি গিয়ে রাত্রির