পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪১৩

রাজা হলেন। কিন্তু তেজবীর সেইখানে বসেই কাঁদতে লাগলেন। দিন নাই, রাত নাই, কেবলই গালে হাত দিয়ে কান্না। তাঁর দাড়ি লম্বা হয়ে ভুঁড়িতে গিয়ে ঠেকল, তবুও তাঁর কান্না থামল না।

 ইজানাগী বললেন, ‘আরে তোর হল কি? রাজ্য দিলাম, রাজ্যে গেলি না, খালি যে কাঁদছিস্?’

 তেজবীর বললেন, ‘আমি রাজ্য চাই না। আমি সেই পাতালে আমার মার কাছে যাব।’

 ইজানাগী বললেন, ‘তবে যা বেটা তুই এখান থেকে দুর হয়ে।’ বলে তিনি তাঁকে তাড়িয়ে দিলেন।

 তখন তেজবীর স্বর্গে গিয়ে গগন-আলোর কাছে উপস্থিত হলেন। গগন-আলো জানতেন, তাঁর মন ভাল নয়, কাজেই তিনি তাঁকে দেখে ভাবলেন, ‘না-জানি কে এসেছে।’

 তেজবীর কিন্তু বললেন, ‘বাবা তাড়িয়ে দিয়েছে, তাই মার কাছে চলেছি। যাবার আগে তোমাকে দেখতে এলাম।’

 গগন আলো বললে, ‘তাই যদি হয়, তাবে তোমার তলোয়াবখানা দাও ত।’

 তেজবীরের কাছ থেকে তলোয়ার নিয়ে গগন-আলো সেটাকে চিবিয়ে গুঁড়ো করে ফেললেন। সেই গুঁড়ো থেকে তিনটি দেবতা জন্মাল।

 তখন তেজবীর বললেন, “আচ্ছা, এখন তোমার গহনাগুলি দাও ত। গহনা নিয়ে তিনি চিবিয়ে গুঁড়ো করে ফেললেন, আর সেই গুঁডো থেকে পাঁচটি দেবতা হল।

 এখন, এই যে সব দেবতা হল, এরা কারা? গগন-আলো বললেন, ‘তোমার তলোয়ার থেকে যারা হযেছে, তারা তোমার, আর আমার গহনা থেকে যারা হয়েছে, তারা আমার।’

 কথাটা ত বেশ ভালোই হয়েছিল, কিন্তু হলে কি হয়, গগন-আলো গহনা থেকেই যে বেশি দেবতা হয়েছিল কাজেই সে কথা তেজবীবের পছন্দ হল না। তাতে তিনি বিষম চটে গিয়ে গগন-আলোর ক্ষেত মাড়িয়ে, খাল বুজিয়ে, বাগান ভেঙে, বিষম দৌরাত্মি আরম্ভ করলেন।

 পর্বতের গুহার ভিতরে নিজের ঘরে বসে সখীকে নিয়ে গগন-আলো কাপড় বুনছিলেন, সেই ঘরের ছাত ভেঙে তেজবীর ভিতরে ছাল-ছাড়ানো মরা ঘোড়া ফেলে দিলেন।

 কাজেই তখন আর গগন-আলো কি করেন, তিনি তেজবীরের ভয়ে গুহার দরজা বন্ধ করে দিলেন। এখন, তিনিই হলেন সূর্যের দেবতা, আলোর মালিক, সেই আলোর মালিক যখন গুহায় লুকাতে গেলেন, তখন কাজেই জগৎ-সংসার অন্ধকার হয়ে গেল।

 সকলে বলল, ‘সর্বনাশ! এখন উপায়?’ তখন তারা করল কি, তারা সবাই মিলে অনেক যুক্তি করে একখানা চমৎকার আরশি তয়ের করল আর যার পর নাই সুন্দর একছড়া মণির মালা গড়াল, আরো কত কি জিনিস খুঁজে নিয়ে এল। সেই-সব জিনিস আর সেই আরশি আর সেই মালা দিয়ে গগন-আলোর পূজা করে, তারপর তারা হেসে, গেয়ে, নেচে, লাফিয়ে চেঁচিয়ে, মোরগ ডাকিয়ে, কি যে একটা শোরগোল জুড়ে দিল, তা না শুনলে বোঝা যায় না।

 গুহার ভিতর থিকে সেই গোলমাল শুনে গগন-আলো ভাবলেন, ‘না জানি কি হয়েছে।’ তিনি আস্তে আস্তে গুহার দরজা একটু ফাঁক করে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আরে তোরা কিসের