পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪১৭

তারপর থেকে দীপ্তানল ভালমানুষ হয়ে গেলেন, আর ছোট ভাইকেই রাজ্য ছেড়ে দিলেন।

তিনটি বর

 এক দেশে এক কামার ছিল, তার মত অভাগা আর কোনো দেশে কখনো জন্মায় নি। তাকে এক জিনিস গড়তে দিলে তার জায়গায় আর-এক জিনিস গড়ে রাখত, একটা কিছু সারাতে দিলে তাকে ভেঙে আরো খোঁড়া করে দিত। আর লোককে ফাঁকি যে দিত, সে কি বলব! কাজেই কেউ তাকে কোনো কাজ করতে দিতে চাইত না, তার দুবেলা দুটি ভাতও জুটত না, লাভের মধ্যে সে তার গিন্নীর তাড়া খেয়ে সারা হত।

 একদিন সে দোকানে বসে গালে হাত দিয়ে ভাবছে। ভয়ানক শীত, গায়ে জড়াবার কিচ্ছু নেই। খিদেয় পেট জ্বলে যাচ্ছে, ঘরে খাবার নেই। এমন সময় কোত্থেকে এক এই লম্বা সাদা দাড়িওলা বুড়ো লাঠি ভর করে কাঁপতে কাঁপতে এসে তার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বলল, ‘জয় হোক বাবা, দুঃখী বুড়োকে কিছু খেতে দাও।’

 কামার বলল, ‘বাবা, খাবার যদি থাকত, তবে নিজেই দুটি খেয়ে বাঁচতুম। দুদিন পেটে কিছু পড়ে নি, ছেলেপুলে নিয়ে উপোস করছি তোমাকে কোত্থেকে দেব? তুমি নাহয় ঘরে এসে একটু গরম হয়ে যাও, আমি হাপর ঠেলে আগুনটা উসকিয়ে দিচ্ছি।’

 বুড়ো তখন কাঁপতে কাঁপতে ঘরে এসে বলল, “আহা, বাঁচালে বাবা, শীতে জমে গিয়েছিলাম। তুমি দেখছি তবে আমার চেয়েও দুঃখী। আমার নিজে খেতে পেলেই চলে, তোমার আবার স্ত্রী আর ছেলেপুলেও আছে।’

 এই বলে বুড়ো আগুনের কাছে এসে বসল, কামার খুব করে হাপর ঠেলে আগুন উসকিয়ে তাকে গরম করে দিল। যাবার সময় বুড়ো তাকে বলল, ‘তুমি আমাকে খেতে দিতে পার নি, তবু তোমার যতদূর সাধ্য তুমি করেছ। এখন তোমার যেমন ইচ্ছা, তিনটি বর চাও, আমি নিশ্চয় দেব।’

 এ কথায় কামার অনেকক্ষণ বুড়োর মুখের দিকে চেয়ে মাথা চুলকোতে লাগল, কিন্তু কি বর চাইতে হবে, বুঝতে পারল না। বুড়ো বলল, ‘শিগ্‌গির বলো,আমার বড্ড তাড়াতাড়ি— ঢের কাজ আছে।’

 তখন কামার থতমত খেয়ে বলল, ‘আচ্ছা, তবে এই বর দিন যে, আমার এই হাতুড়িটি যে একবার হাতে করবে, সে আর আমার হুকুম ছাড়া সেটি রেখে দিতে পারবে না। আর যদি তা দিয়ে ঠুকতে আরম্ভ করে, তবে আমি থামতে না বললে আর থামতে পারবে না।’

 বুড়ো বলল, ‘আচ্ছ তাই হবে। আর কি বর চাই?’

 কামার বলল, ‘আমার এই কেদারাখানিতে যে বসবে, সে আমার হুকুম ছাড়া তা থেকে উঠতে পারবে না।’

 বুড়ো বলল, ‘আচ্ছা তাও হবে। আর কি?’

 কামার বলল, ‘আমার এই থলিটির ভিতরে আমি কোনো টাকা রাখলে আমি ছাড়া আর