পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪১৯

নেই। দিন যাচ্ছে আর তার বাবুগিরি ক্রমেই বেড়ে উঠছে। সে বাবুগিরিতে সাত বছর শেষ হবার ঢের আগেই শয়তানের দেওয়া সব টাকা ফুরিয়ে গেল, আর ঘরে একটি পয়সাও নেই, একমুঠো চালও নেই। তখন কাজেই তাকে আবার যে কামার সেই কামারই হতে হল, নইলে খাবে কি?

 তারপর একদিন সে তার দোকানে বসে একটা লোহা পিটছে আর ভাবছে, কখন খদ্দের আসবে, এমন সময় একজন বুড়ো-হেন লোক ধীরে ধীরে এসে তার কাছে দাঁড়াল। কামার আগে ভাবল, ‘এই রে, খদ্দের!’ তারপর চেয়ে দেখল, ‘ওমা! এ যে শয়তান!’

 শয়তান বলল, ‘মনে আছে ত? সাত বছর শেষ হয়েছে, এখন আমার সঙ্গে চলো।’

 কামার বলল, ‘তাই ত, আমি গেলে আমার ছেলেপুলেগুলো কি খাবে? তোমার ত কতই লোক আছে, আমাকে দয়া করে ছেড়ে দাও।’

 শয়তান বলল, ‘সে হবে না! আমাকে ফাঁকি দেওয়া বড় শক্ত কাজ;চলো, এখনই চলো।’

 কামার বলল, ‘তুমি ছাড়বেই না যখন তখন ত চলতেই হবে, কিন্তু আমার হাতের এই কাজটি শেষ করে যেতে পারলে আমার ছেলেগুলোর পক্ষে বড় ভাল হত— এর দরুন কিছু পয়সা পাওয়া যাবে। তুমি দাদা আমার উপকারটুকু করো না—আমি সকলের কাছে বিদায় হয়ে নিই, ততক্ষণ তুমি বসে এই হাতুড়িটা দিয়ে এই লোহাখানাকে পেটো।’

 শয়তান কাজে এমন দুষ্টু হলেও কথাবার্তায় ভারি ভদ্রলোেক, সে কামারের কথা শুনে তখনই তার হাত থেকে হাতুড়িটি নিয়ে লোহাটাকে পেটাতে লাগল। সে জানত না যে সেটা সেই দেবতার বর দেওয়া সর্বনেশে হাতুড়ি, তা দিয়ে একবার পিটতে আরম্ভ করলে আর কামারের হুকুম ছাড়া থামবার উপায় নেই। কামার তার হাতে সেই হাতুড়ি দিয়েই অমনি যে ঘর থেকে বেরুল, আর একমাসের ভিতরে সেই মুখোই হল না।

 একমাস পরে কামার দোকানে ফিরে এসে দেখল যে শয়তান তখনো ঠনাঠন ঠনাঠন করে বেদম হাতুড়ি পিটছে, আর তার দশা যে হয়েছে! খালি শয়তান বলে সে এতক্ষণ বেঁচে আছে, আর কেউ হলে মরেই যেত। কামারকে দেখে সে অনেক মিনতি করে বলল, ‘ভাই ঢের ত হয়েছে আমাকে মেরে ফেলে তোমার লাভ কি? তার চেয়ে তোমাকে আরো তিন থলি মোহর দিচ্ছি আরো সাত বছরে ছুটি দিচ্ছি, আমাকে ছেড়ে দাও।’

 কামার ভাবল, মন্দ কি। আর তিন থলি মোহর দিয়ে সাত বছর সুখে কাটানো যাক। কাজেই সে শয়তানকে বলল, ‘আচ্ছা, তবে তাই হোক।’

 তখন শয়তান কামারকে আবার তিন থলি মোহর দিয়ে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে চলে গেল, কামারও সেই টাকা দিয়ে আবার ধুমধাম জুড়ে দিল। তারপর সে টাকা শেষ হতেও আর বেশি দেরি হল না, তখন আর হাতুড়ি-পেটা ভিন্ন উপায় নেই। এমনি করে আবার সাত বছর কেটে গেল।

 এবার শয়তান কামারকে নিতে এসে দেখে তার বাড়িতে ভারি গোলমাল। কি কথা নিয়ে কামার তার গিন্নির উপর বিষম চটেছে, আর তাকে ধরে ভয়ানক মারছে। কামারের গিন্নিও যেমন-তেমন মেয়ে নয়, পাড়ার সকলে তার জ্বালায় অস্থির থাকে। কামারকে সে ঝাঁটা দিয়ে কম নাকাল করছেনা, কিন্তু কামারের হাতে কিনা হাতুড়ি তাই জিত হচ্ছে তারই। শয়তান এসে এ-সব দেখে কামারকে ভয়ানক দুই থাপ্পড় লাগিয়ে বলল, ‘বেটা পাজি, স্ত্রীকে