পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

ধরে মারিস? চল্, আমার সঙ্গে চল্।’

 শয়তান ভেবেছিল, এতে কামারে স্ত্রী খুব খুশি হয়ে তার সাহায্য করবে। কিন্তু কামারের স্ত্রী তার কিছু না করে, ‘বটে রে হতভাগা, তোর এত বড় আস্পর্ধা! আমার স্বামীর গায়ে হাত তুলছিস!’ বলে, সেই ঝাঁটা দিয়ে শয়তানের নাকে মুখে এমনি সপাংসপ মারতে লাগল যে বেচারার দমই ফেলা দায়। সে তাতে বেজায় থতমত খেয়ে একটা চেয়ারের উপর বসে পড়ল সেই চেয়ার, যাতে একবার আর বিনা হুকুমে ওঠবার জো নেই।

 কামার দেখল যে, শয়তান এবারে বেশ ভালমতেই ধরা পড়েছে, হাজার টানাটানিতেও উঠতে পারছে না। তখন সে তার চিমটেখানি আগুনে তাতিয়ে নিয়ে তা দিয়ে আচ্ছা করে তার নাকটা টিপে ধরল। তারপর তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনে মিলে ‘হেঁইয়ো’ বলে সেই চিমটে ধরে টানতেই নাকটা রাবারেব মত লম্বা হতে লাগল। এক হাত, দু হাত, চার হাত, আট হাত—নাক যতই লম্বা হচ্ছে, শয়তান বেটা ততই ষাঁড়ের মত চেঁচাচ্ছে। নাকটা যখন কুড়ি হাত লম্বা হল তখন শয়তান আর থাকতে না পেরে নাকিসুরে বলল, ‘দোহাই দাদা! আর টেনো না, মরে যাব।’

 কামার বলল, ‘আরো তিন থলি টাকা, আর সাত বছরের ছুটি— দেবে কিনা বলো।’ শয়তান ব্যস্ত হয়ে বলল, ‘এক্ষুনি, এক্ষুনি, এই নাও।’ বলতে বলতেই তিন থলি ঝকঝকে মোহর এসে কামারের কাছে হাজির হল; কামার সেগুলো সিন্দুকে তুলে শয়তানকে বলল, ‘আচ্ছা তবে যাও।’ শয়তান ছাড়া পেয়েই সেখান থেকে এমনি ছুট দিল যে, ছুট যাকে বলে।

 তখন কামার আর তার স্ত্রী মেঝেয় গড়াগড়ি দিয়ে যে হাসিটা হাসল! আর সাত বছরের জন্য তাদের কোনো ভাবনা রইল না। সাত বছর যখন শেষ হল, তখন কামারের টাকাও ফুরিয়ে গেল, তাকে আবার তার ব্যবসা ধরতে হল, ততদিনে শয়তানও আবার তাকে নেবার জন্য এসে উপস্থিত হল।

 সাত বছর পরে শয়তান আবার কামারকে নেবার জন্য এসে উপস্থিত হয়েছে। কিন্তু গত বারে সে নাকে যে চিমটি খেয়ে গিয়েছিল, তার কথা ভেবে আর সে সোজাসুজি কামারের সামনে এসে দাঁড়াতে ভরসা পাচ্ছে না, তাই এবারে সে ভারি এক ফন্দি এঁটে এসেছে।

 শয়তান জানে যে, কেউ যদি তাকে নিজে থেকে আদর করে নিয়ে যায় তা হলে আর সে কিছুতেই তার হাত ছাড়াতে পারে না। এখন শয়তান করল কি, একটি ঝকঝকে মোহর হয়ে ঠিক কামারের দোকানের সামনে রাস্তায় গিয়ে পড়ে রইল। সে ভাবল যে কামার খেতে পায় না, মোহরটি দেখলে সে পরম আদরে তাকে এসে তুলে নিয়ে যাবে, তারপর আর সে শয়তানকে ফাঁকি দিয়ে যাবে কোথায়?

 যে কথা সেই কাজ। কামার সেই মোহরটিকে দেখতে পাওয়া মাত্রই ছুটে গিয়ে সেটিকে তুলে এনে তার থলেয় পুরল। তখন থলের ভিতর থেকে শয়তান হেসে তাকে বলল, ‘কি বাপু, এখন কোথায় যাবে? নিজে ধরে আমাকে ঘরে এনেছ, তার মজাটা এখনই দেখতে পাবে।’

 কামার বলল, ‘কী রে বেটা? তুই বুঝি আর মরবার জায়গা জোটে নি, তাই আমার থলের ভিতরে এসেছিস? দাঁড়া, তোকে দেখাচ্ছি!’

 একথায় শয়তান এমনি রেগে গেল যে, পারলে সে তখনই কামারকে মেরে শেষ করে। কিন্তু থলের বাইরে এলে তবে ত শেষ করবে! সে যে সেই বিষম থলে— তার ভিতরে