করে বলল, ‘মহারাজ! ভূতের ঢোল বড় সর্বনেশে জিনিস! ওটাকে কখনো আপনার ঘরে রাখবেন না। ওটাকে এখনি পুড়িয়ে ফেলুন।’
রাজামশাইও বললেন ‘বাপ রে! ভূতের ঢোল ঘরে রাখব এক্ষুনি ওটাকে এনে পোড়াও।’
যেই এ কথা বলা, অমনি বাঘা দুহাতে চোখ ঢেকে ‘হাউ-হাউ-হাউ-হাউ’ করে কেঁদে গড়াগড়ি দিতে লাগল।
সেদিন বাঘাকে নিয়ে গুপির কি মুশকিলই হয়েছিল। ঢোল পোড়াবার নাম শুনেই বাঘা কাঁদতে আরম্ভ করেছে, ঢোল এনে তাতে আগুন ধরিয়ে দিলে না-জানি সে কি করবে। তখন, সেটা যে তারই ঢোল, সে কথা কি আর বাঘা সামলে রাখতে পারবে? কি সর্বনাশ! এখন বুঝি ধরা পড়ে প্রাণটাই হারাতে হয়।
গুপির বড়ই ইচ্ছা হচ্ছিল যে বাঘাকে নিয়ে ছুটে পালায়। কিন্তু তার ত আর জো নেই, সভায় বসবার সময় যে সেই জুতোগুলো পা থেকে খুলে রাখা হয়েছে।
এদিকে কিন্তু বাঘার কাণ্ড দেখে সভাময় এক বিষম হুলুস্থুল পড়ে গেছে। সবাই ভাবছে, বাঘার নিশ্চয় একটা ভারি অসুখ হয়েছে, আর সে বাঁচবে না। রাজবাড়ির বদ্যিঠাকুর এসে বাঘার নাড়ি দেখে যার পর নাই গম্ভীরভাবে মাথা নাড়লেন। বাঘাকে খুব করে জোলাপের ওষুধ খাইয়ে তার পেটে বেলেস্তারা লাগিয়ে দেওয়া হল। তারপর বদ্যিঠাকুর বললেন, ‘এতে যদি বেদনা না সারে, তবে পিঠে আর-একটা, তাতেও না সারলে দুপাশে আর দুটো বেলেস্তারা লাগাতে হবে।’
এ কথা শুনেই বাঘার কান্না তৎক্ষণাৎ থেমে গেল। তখন সকলে ভাবল যে, বদ্যিঠাকুর কি চমৎকার ওষুধই দিয়েছে, দিতে দিতেই বেদনা সেরে গেছে।
যা হোক, বাঘা যখন দেখল যে তার কান্নাতে ঢোল পোড়াবার কথাটা চাপা পড়ে গেছে, তখন সেই বেলেস্তারার বেদনার ভিতরেই তার মনটা কতক ঠাণ্ডা হল। রাজামশাই তখন তাকে খুব যত্নের সহিত তার ঘরে শুইয়ে রেখে এলেন, গুপি তার কাছে বসে তার বেলেস্তারায় হাওয়া করতে লাগল।
তারপর সকলে ঘর থেকে চলে গেলে গুপি বাঘাকে বলল, ‘ছি, ভাই, যেখানে-সেখানে কি এমন করে কাঁদতে আছে? দেখ দেখি, এখন কি মুশকিল হল।’ বাঘা বলল, ‘আমি যদি না কাঁদতুম, তা হলে ত এতক্ষণে আমার ঢোলকটি পুড়িয়ে শেষ করে দিত। এখন না হয় একটু জ্বলুনি সইতে হচ্ছে, কিন্তু আমার ঢোলকটা ত বেঁচে গেছে!’
বাঘা আর গুপি এমনি কথাবার্তা বলছে। এদিকে রাজামশাই সভায় ফিরে এলে দারোগামশাই তার কানে কানে বললেন, ‘মহারাজ, একটা কথা আছে, অনুমতি হয় ত বলি।’ রাজা বললেন, ‘কি কথা?’ দারোগা বললেন, ‘মহারাজ, ঐ যে লোকটা গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদল, সে আর তার সঙ্গের ঐ লোকটা, সেই দুই ভূত আমি তাদের চিনতে পেরেছি।’ রাজা বললেন, ‘তাই ত হে, আমারও একটু যেন সেইরকমই ঠেকছিল। তা হলে ত বড় মুশকিল দেখছি। বলো ত এখন কি করা যায়?’
তখন এ কথা নিয়ে সভার মধ্যে ভারি একটা কানাকানি শুরু হল। কেউ বলল, ‘রোজা ডাকো, ও দুটোকে তাড়িয়ে দিক।’ আর-একজন বলল, ‘রোজা যদি তাড়াতে না পারে, তখন ত সে দুটো ক্ষেপে গিয়ে একটা বিষম কিছু করতে পারে। তার চেয়ে কেন রাত্রে ঘুমের