পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪৩৩

দিয়ে ফুরিয়ে গেল! আজ আমাদের প্রসাদগুলো আপনি মাপ করুন;কালকের যত প্রসাদ, সব মহারাজ একাই খাবেন!’ রাজা তাতে বললেন, ‘আচ্ছা তাই হবে। খবরদার মনে থাকে যেন।’

 পরদিন রাজামশাই প্রসাদ খাবেন, তাই একপ্রহর বেলা থাকতেই তিনি ঠাকুরবাড়ির আঙিনায় এসে আকাশের পানে তাকিয়ে বসে আছেন। আর সকলে ভয়ে ভয়ে একটু দূরে ব’সে তাঁকে ঘিরে তামাশা দেখছে। আর পূজোর ঘটা অন্যদিনের চেয়ে শতগুণ; সবাই ভাবছে, দেবতা তাতে খুশি হয়ে রাজামশাইকে আরো ভাল প্রসাদ দেবেন।

 রাত-দুপুরের সময় গুপি আর বাঘা আরো আশ্চর্যরকমের মিঠাই নিয়ে এসে মন্দিরের চুড়োয় বসল। আজ তাদের পরনে খুব জমকালো পোশাক, মাথায় মুকুট, গলার হার, হাতে বালা, কানে কুণ্ডল তারা দেবতা সেজে এসেছে। ধোঁয়ার জন্য কিছুই দেখা যাচ্ছে না, কিন্তু তবু রাজামশাই আকাশের পানে তাকিয়ে আছেন। এমন সময় গুপি আর বাঘা হাসতে হাসতে তাঁর উপরে সেই মিঠাইগুলো ফেলে দিল। তাতে রাজামশাই প্রথমে একটা চিৎকার দিয়ে তিন হাত লাফিয়ে উঠেলেন, তারপর তাড়াতাড়ি সামলিয়ে নিয়ে, দুহাতে মিঠাই তুলে মুখে দিতে লাগলেন, আর ধেই ধেই ক’রে নাচটা যে নাচলেন!

 এমন সময় গুপি আর বাঘা হঠাৎ মন্দিরের চুড়ো থেকে নেমে এসে রাজার সামনে দাঁড়াল। তাদের দেখে সকলে ’ঠাকুর এসেছেন’ ঠাকুর এসেছেন ব’লে কে আগে গড় করবে ভেবে ঠিক পায় না; রাজা মশায়ই ত লম্বা হয়ে মাটিতে পড়েই রয়েছেন, আর খালি মাথা ঠুকছেন। গুপি তাঁকে বলল, ‘মহারাজ! তোমার নাচ দেখে আমরা বড়ই তুষ্ট হয়েছি; এসো তোমার সঙ্গে কোলাকুলি করি।’ রাজা তা শুনে যেন হাতে স্বর্গ পেলেন; দেবতার সঙ্গে কোলাকুলি, সে কি কম সৌভাগ্যের কথা?

 কোলাকুলি আরম্ভ হল। সকলে ‘জয় জয়’ বলে চেঁচাতে লাগল। সেই অবসরে গুপি আর বাঘা রাজামশাইকে খুব ক’রে জড়িয়ে ধ’রে বলল, ‘এখন তবে আমাদের ঘরে যাব!’ বলতে বলতেই তারা তাঁকে সুদ্ধ একেবারে এসে তাদের নিজের ঘরে উপস্থিত। ঠাকুরবাড়ির আঙিনায় সেই লোকগুলো অনেকক্ষণ ধ’রে হাঁ করে আকাশের পানে চেয়ে রইল। তারপর যখন রাজা মশাই আর ফিরলেন না, তখন তারা যে যার ঘরে এসে বলল, ‘কি আশ্চর্যই দেখলাম! রাজামশাই সশরীরে স্বর্গে গেলেন। দেবতারা নিজে তাঁকে নিতে এসেছিলেন!’

 এদিকে রাজামশাই গুপি আর বাঘার কোলে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন, তাদের ঘরে এসেও অনেকক্ষণ তাঁর জ্ঞান হয় নি। ভোরের বেলায় তিনি চোখ মেলে দেখলেন যে, সেই দু’টো ভূত তাঁর মাথার কাছে ব’সে আছে। অমনি তিনি তাদের পায়ে প’ড়ে কাঁপতে কাঁপতে বললেন, ‘দোহাই বাবা! আমাকে খেয়ো না! আমি দুশো মোষ মেরে তোমাদের পুজো করব।’

 গুপি বলল, ‘মহারাজ, আপনার কোন ভয় নেই। আমরা ভূতও নই, আপনাকে খেতেও যাচ্ছি না।’ রাজামশাইয়ের কিন্তু তাতে একটুও ভরসা হল না। তিনি আর কোনো কথা না বলে মাথা গুঁজে ব’সে কাঁপতে লাগলেন।

 এদিকে বাঘা এসে হাল্লার রাজাকে বলল, ‘কাল রাত্রে আমরা শুণ্ডীর রাজাকে ধ’রে এনেছি; এখন কি আজ্ঞা হয়? হাল্লার রাজা বললেন, ‘তাঁকে নিয়ে এসো।’