পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

করিয়া উঠিল।

 আরো তামাশা হইত, কিন্তু জ্যাক এই সময়ে জানালার ভিতর দিয়া গির্জার ঘড়ি দেখিতে পাইল। তাহাকে রেলে অনেক দূর যাইতে হইবে, আর দেরি করিলে চলিতেছে না। সুতরাং সে বিল্লির কাছে বিদায় লইল। বিল্লি কিন্তু তাহাকে অত তাড়াতাড়ি ছাড়িতে রাজি নহে। জ্যাকের সঙ্গে সঙ্গে সেও খাঁচার দরজায় আসিয়া দাঁড়াইল—প্রহরী দরজা খুলিলে সেও জ্যাকের সঙ্গে যাইবে! প্রহরী দরজা খুলিতেছিল, বাঘের কাণ্ড দেখিয়া আর খুলিল না। জ্যাক তিনবার চুপচাপ সরিয়া পড়িতে চেষ্টা করিল, বাঘ তাহার কোটের কোণ কামড়াইয়া ধরিয়া তিনবার ফিরাইল। জ্যাক মুশকিলে পড়িয়া বলিল, ‘এ ত বড় মুশকিল রে বাবু। আমি ত থাকতে আসি নি, আমি শুধু দেখতে এসেছিলাম।’

 কিন্তু প্রহরীর মুখ ততক্ষণে গম্ভীর হইয়া উঠিয়াছে। মান্না যতই যাইতে চাহিতেছে বাঘ ততই বিরক্ত হইতেছে শেষে চটিয়া গিয়া এক থাপ্পড় বসাইয়া দিলেই ত মাল্লার দফা নিকাশ হইয়া যায়! এই সময়ে এক বুদ্ধি জুটিল। খাঁচাটাতে দুই কামরা। বাহিরটাতে বাঘ সকল লোকের সামনে তামাশা দেখায় ভিতরেরটাতে বসিয়া সে আহার করে। মাঝখানে দবজা আছে, বাহির হইতেই তাহা খোলা ও বন্ধ করা যায়। এই ভিতরের কামরায় বড় এক টুকরা মাংস ঢুকাইয়া দেওয়া হইল, আর বাঘ অমনি বন্ধু কে ভুলিয়া খাইবার ঘরে ঢুকিল। চতুর প্রহরী তৎক্ষণাৎ মাঝখানের দরজা বন্ধ কবিয়া দিল। জ্যাকও সুযোগ বুঝিয়া তাহার পথ ধরিল।

জোলা আর সাত ভূত

 এক জোলা ছিল, সে পিঠে খেতে বড় ভালবাসত।

 একদিন সে তার মাকে বলল, ‘মা, আমার বড় পিঠে খেতে ইচ্ছে করছে, আমাকে পিঠে করে দাও।’

 সেইদিন তার মা তাকে লাল-লাল, গোল-গোল চ্যাপটা-চ্যাপটা সাতখানি চমৎকার পিঠে করে দিল। জোলা সেই পিঠে পেয়ে ভারি খুশি হয়ে নাচতে লাগল আর বলতে লাগল,

‘একটা খাব, দুটো খাব,
সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’

 জোলার মা বলল, ‘খালি নাচবিই যদি, তবে খাবি কখন?’

 জোলা বলল, ‘খাব কি এখানে? সবাই যেখানে দেখতে পাবে, সেখানে খাব।’ ব’লে জোলা পিঠেগুলি নিয়ে নাচতে নাচতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল আর বলতে লাগল,

‘একটা খাব, দুটো খাব,
সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’

 নাচতে নাচতে জোলা একেবারে সেই বটগাছতলায় চলে এল, যেখানে হাট হয়। সেই গাছের তলায় এসে সে খালি নাচছে আর বলছে,