পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

দাও।

 তখন তার বন্ধু বিছানা করে তাকে ঘুম পাড়িয়ে, তার হাঁড়িটি বদলে তার জায়গায় ঠিক তেমনি ধরনের আর-একটা হাঁড়ি রেখে দিল। জোলা তার কিছুই জানে না, সে বিকালে ঘুম থেকে উঠে বাড়ি চলে এসেছে আর তার মাকে বলছে, ‘দেখো মা, কি চমৎকার একটা হাঁড়ি এনেছি। তুমি কি খাবে মা? সন্দেশ খাবে? পিঠে খাবে? দেখো আমি এর ভিতর থেকে সে-সব বার করে দিচ্ছি।’

 কিন্তু এত আর সে হাঁড়ি নয়, এর ভিতর থেকে সে-সব জিনিস বেরুবে কেন? মাঝখান থেকে জোলা বোকা বনে গেল, তার মা তাকে বকতে লাগল।

 তখন ত জোলার বড্ড রাগ হয়েছে, আর সে ভাবছে সেই ভূতব্যাটাদেরই এ কাজ। তার বন্ধু যে তাকে ঠকিয়েছে, এ কথা তার মনেই হল না।

 কাজেই পরদিন সে আবার সেই বটগাছতলায় গিয়ে বলতে লাগল,

‘একটা খাব, দুটো খাব,
সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’

 তা শুনে আবার ভূতগুলো কাঁপতে কাঁপতে একটা ছাগল নিয়ে এসে তাকে হাত জোড় করে বলল, ‘মশাই গো! আপনার পায়ে পড়ি, এই ছাগলটা নিয়ে যান। আমাদের ধরে খাবেন না।’

 জোলা বলল, ‘ছাগলের কি গুণ?’

 ভূতরা বলল, ‘ওকে সুড়সুড়ি দিলে ও হাসে, আর ওর মুখ দিয়ে খালি মোহর পড়ে।’

 অমনি জেলা ছাগলের গায়ে সুড়সুড়ি দিতে লাগল। আর ছাগলটা হিহি হিহি’ করে হাসতে লাগল, আর মুখ দিয়ে ঝর ঝর করে খালি মোহর পড়তে লাগল। তা দেখে জোলার মুখে ত আর হাসি ধরে না। সে ছাগল নিয়ে ভাবল যে, এ জিনিসটি বন্ধুকে না দেখালেই নয়।

 সেদিন তার বন্ধু তাকে আরো ভাল বিছানা করে দিয়ে দুহাতে দুই পাখা নিয়ে হাওয়া করল। জোলার ঘুমও হল তেমনি। সেদিন আর সন্ধ্যার আগে তার ঘুম ভাঙল না। তার বন্ধু ত এর মধ্যে কখন তার ছাগল চুরি করে তার জায়গায় আর-একটা ছাগল রেখে দিয়েছে।

 সন্ধ্যার পর জোলা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে তার বন্ধুর সেই ছাগলটা নিয়ে বাড়ি এল; এসে দেখল যে তার মা তার দেরি দেখে ভারি চটে আছে তা দেখে সে বলল, ‘রাগ আর করতে হবে না, মা; আমার ছাগলের গুণ দেখলে খুশি হয়ে নাচবে!’ এই বলেই সে ছাগলের বগলে আঙুল দিয়ে বলল, কাতু কুহু কুহু কুতু!!!’

 ছাগল কিন্তু তাতে হাসলো না, তার মুখ দিয়ে মোহরও বেরুল না। জোলা আবার তাকে সুড়সুড়ি দিয়ে বলল, ‘কাতুকুতু কুতু কুতু কুতু কুতু কুতু কুতু!!’

 তখন সেই ছাগল রেগে গিয়ে শিং বাগিয়ে তার নাকে এমনি বিষম গুঁতো মারল যে সে চিত হয়ে পড়ে চেঁচাতে লাগল আর তার নাক দিয়ে রক্তও পড়ল প্রায় আধ সের তিন পোয়া। তার উপর আবার তার মা তাকে এমন বকুনি দিল যে, তেমন বকুনি সে আর খায় নি।