পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪৪৩

 তাতে জোলার রাগ যে হল, সে আর কি বলব! সে আবার সেই বটগাছতলায় গিয়ে চেঁচিয়ে বলতে লাগল,

‘একটা খাব, দুটো খাব,
সাত বেটাকেই চিবিয়ে খাব!’

 ‘বেটারা আমাকে দুবার দুবার ফাঁকি দিয়েছিল, ছাগল দিয়ে আমার নাক থেঁতলা করে দিয়েছিস—আজ আর তোদের ছাড়ছি নে!’

 ভূতেরা তাতে ভারি আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘সে কি মশাই, আমরা কি করে আপনাকে ফাঁকি দিলুম, আর ছাগল দিয়েই বা কি করে আপনার নাক থেঁতলা করলুম?’

 জোলা তার নাক দেখিয়ে বলল, ‘এই দেখ না, গুঁতো মেরে সে আমার কি দশা করেছে। তোদের সব কটাকে চিবিয়ে খাব!’

 ভূতেরা বলল, ‘সে কখনো আমাদের ছাগল নয়। আপনি কি এখান থেকে সোজাসুজি বাড়ি গিয়েছিলেন?’

 জোলা বলল, ‘না, আগে বন্ধুর ওখানে গিয়েছিলাম। সেখানে খানিক ঘুমিয়ে তারপর বাড়ি গিয়েছিলাম।’

 ভূতেরা বলল, ‘তবেই ত হয়েছে! আপনি যখন ঘুমোচ্ছিলেন, সেই সময় আপনার বন্ধু আপনার ছাগল চুরি করেছে।’ এ কথা শুনেই জোলা সব বুঝতে পারল। সে বলল, ‘ঠিক ঠিক। সে বেটাই আমার হাঁড়িও চুরি করেছে, ছাগলও চুরি করেছে। এখন কি হবে?’

 ভূতেরা তাকে একগাছি লাঠি দিয়ে বলল, ‘এই লাঠি আপনার হাঁড়িও এনে দেবে, ছাগলও এনে দেবে! ওকে শুধু একটিবার আপনার বন্ধুর কাছে নিয়ে বলবেন, লাঠি লাগ ত! তা হলে দেখবেন, কি মজা হবে! লাখ লোক ছুটে এলেও এ লাঠির সঙ্গে পারবে না, লাঠি তাদের সকলকে পিটিয়ে ঠিক করে দেবে।’

 জোলা তখন সেই লাঠিটি বগলে করে তার বন্ধুকে গিয়ে বলল, ‘বন্ধু, একটা মজা দেখবে?’

 বন্ধু ত ভেবেছে না জানি কি মজা হবে। তারপর যখন জোলা বলল, ‘লাঠি, লাগত!’ তখন সে এমনি মজা দেখল, যেমন তার জন্মে আর কখনো দেখে নি। লাঠি তাকে পিটে পিটে তার মাথা থেকে পা অবধি চামড়া তুলে ফেলল। সে ছুটে পালাল, লাঠি তার সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে তাকে পিটতে পিটতে ফিরিয়ে নিয়ে এল। তখন সে কাঁদতে কাঁদতে হাত জোড় করে বলল, ‘তোর পায়ে পড়ি ভাই, তোর হাঁড়ি নে, তোর ছাগল নে, আমাকে ছেড়ে দে!’

 জোলা বলল, ‘আগে ছাগল আর হাঁড়ি আন্, তবে তোকে ছাড়ব।’

 কাজেই বন্ধুমশাই আর কি করেন? সেই পিটুনি খেতে খেতেই হাঁড়ি আর ছাগল এনে হাজির করলেন। জোলা হাঁড়ি হাতে নিয়ে বলল, ‘সন্দেশ আসুক ত!’ অমনি হাঁড়ি সন্দেশে ভরে গেল। ছাগলকে সুড়সুড়ি দিতে না দিতেই সে হো হো করে হেসে ফেলল, আর তার মুখ দিয়ে চারশোটা মোহর বেরিয়ে পড়ল। তখন সে তার লাঠি, হাঁড়ি আর ছাগল নিয়ে বাড়ি চলে গেল।

 এখন আর জোলা গরিব নেই, সে বড়মানুষ হয়ে গেছে। তার বাড়ি, তার গাড়ি, হতিঘোড়া-খাওয়া-পরা, চাল-চলন, লোকজন, সব রাজার মতন। দেশের রাজা তাকে যার