পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

কতক্ষণ ডাকব? এদিকে ভাতটাত সব ত পুড়ে ছাই হয়ে গেল।’ তখন কাজি সাহেব ফিরে দেখেন চাকর তাঁকে একটা আঙুল দিয়ে ইশারা করেছে—ওদিকে সত্যি সত্যিই ভাত পুড়ে ছাই।

 একদিন রাত্রে কাজি সাহেবের বাড়ি চোর ঢুকেছে। বুদ্ধু খচ্‌মচ্ শব্দ শুনে জিজ্ঞাসা করল, ‘কে রে? চোরটা গম্ভীরভাবে বলল, ‘কেউ নই বাবা, কেউ নই।’ তা শুনে বুদ্ধু আবার নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুমাতে লাগল। সকালে উঠে কাজি সাহেব দেখেন তাঁর সব চুরি হয়ে গিয়েছে। বুদ্ধুকে জিজ্ঞাসা করে যখন রাত্রের সব শুনলেন তিনি খুব রেগে গালাগালি করতে লাগলেন। কিন্তু বুদ্ধু তাতে মুখ ভারি বেজার করে বলল, ‘তা কি করব—সে আমায় বারবার করে বললে, ‘কেউ নই, কেউ নই’ লোকটা ত দেখছি শুধু চোর নয়—ব্যাটা বেজায় মিথ্যাবাদী।’

 একদিন কাজি সাহেব সহরের বাইরে কোথায় যাবেন। যাবার সময় বুদ্ধুকে বলে গেলেন, ‘দেখিস, দরজাটার উপর ভাল করে চোখ রাখিস দরজা ছেড়ে কোথায়ও যাস নে, তাহলে চোরে আমার সব নিয়ে যাবে।’ কাজি সাহেব চলে গেলেন—চাকর বেচারা একটা লাঠি নিয়ে দরজায় পাহারা দিতে লাগল। একদিন গেল, দুদিন গেল। তার পরদিন বুদ্ধু শুনল এক জায়গায় ভারি তামাশা দেখান হচ্ছে। তাই ত, বেচারা কি করে? অনেক ভেবে সে করল কি বাড়ির দরজাখানা খুলে সেটাকে ঘাড়ে নিয়ে তামাশা দেখতে গেল। এদিকে বাড়িতে চোর ঢুকে যা কাণ্ড করে গেল সে আর কি বলব! কাজি সাহেব বাড়িতে এসে দেখেন সর্বনাশ, বাড়ির সিন্ধুক আলমারি সব খালি। ওদিকে বুদ্ধ বসে তামাশা দেখছে আর খুব সাবধানে দরজা পাহারা দিচ্ছে।

ফিঙে আর কুঁকড়ো

 একটা দানব ছিল, তার নাম ছিল ফিঙে, সে দেড়শো হাত লম্বা শালগাছে ছড়ি হাতে নিয়ে বেড়াত। আর-একটা দানব ছিল, তার নাম কুঁকড়ো। সে ঘুঁষো মেরে লোহার মুগুর থেঁতলা করে দিত।

 আর যত দানব ছিল, তাদের সকলকেই কুঁকড়ো ঠেঙিয়ে ঠিক করে দিয়েছে, এখন সে ফিঙের সন্ধানে দেশে-বিদেশে ঘুরে বেড়ায়। এ কথা শুনে অবধি ফিঙের আর ঘুম হয় না, কাজেই সেও কুঁকড়োকে এড়াবার জন্য খালি দেশ-বিদেশে ঘুরে বেড়ায়। ফিঙে সমুদ্রের ধারে গেলে,তা শুনে কুঁকড়ো সেই দিক পানে রওনা হল। সে খবর পেয়েই ফিঙে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে তার নিজের ঘরে চলে এল।

 ঘরখানি ছিল একটা উঁচু পর্বতের উপর; সেখান থেকে দশ দিনের পথ অবধি দেখতে পাওয়া যায়। কাজেই ফিঙে ভাবল যে, ওখানে গেলে কুঁকড়ো নিতান্ত আচমকা এসে তাকে মারতে পারবে না। ফিঙেকে অমন ব্যস্ত হয়ে ফিরে আসতে দেখে তার স্ত্রী উনা বলল, ‘কি হয়েছে?’ ফিঙে আঙ্গুল দিয়ে সমুদ্রের দিকে দেখিয়ে বলল, ‘ঐ কুঁকড়ো আসছে। বেটা ঘুঁষো মেরে লোহার মুগুর থেঁতলা করে দেয়। এবারে দেখছি ভারি বেগতিক।’