পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪৫৫

তারপর?

 এক যে রাজা;তার ভারি গল্প শোনার শখ। কিন্তু তা থাকলে কি হয়, রাজামশাইকে কেউ গল্প শুনিয়ে খুশি করতে পারে না।

 রাজামশাই বলেন, ‘যে আমাকে গল্প শুনিয়ে খুশি করতে পারবে, তাকে আমার অর্ধেক রাজ্য দিব, না পারলে কান কেটে নিব।’ তা শুনে দেশ বিদেশের কত ভারি ভারি নামজাদা গল্পওয়ালা কোমর বেঁধে গোঁফে তা দিয়ে গল্পের ঝুড়ি নিয়ে আসে, কিন্তু কেউ রাজামশাইকে খুশি করতে পারে না। যাবার সময় সকলেই কাটা কান নিয়ে দেশে যায়।

 গল্প বলতে গেলেই রাজামশাই খালি বলেন, ‘তারপর?’ ‘তারপর’ ‘তারপর’ করে গল্পওয়ালার দফা শেষ করে তবে তিনি ছাড়েন। রাক্ষস মরে গেল’— ‘তারপর?’ রাজপুত্র বেঁচে গেলেন— ‘তারপর?’ বৌ নিয়ে দেশে এলেন’- ‘তারপর?’ ভারি আনন্দ হল— ‘তারপর? আমার কথা ফুরল’ ‘তারপর?’ নটে গাছটি মুড়ল’—‘তারপর?’ এমনি করে আর কত বলবে? কাজেই শেষে একবার তাকে বলতে হয়, ‘আর আমি জানি না’ বা ‘আর বলতে পারছি না।’

 তা হলেই রাজা বলেন ‘তবে গল্প বলতে এসেছিলে কেন? কাট তবে বেটার কান।’

 এই ত ব্যাপার। রাজামশাইয়ের তারপরের শেষও কেউ করে উঠতে পারে না, অর্ধেক রাজ্যও পায় না, লাভের মধ্যে কানটি যায়।

 সেই দেশে থাকে এক নাপিত সে বড় কুঁড়ে, কিন্তু ভারি সেয়ানা। সে ভাবল অর্ধেক রাজ্য যদি পাই;তবে নেহাৎ মন্দ হবে না;একবার চেষ্টা করে দেখলে ক্ষতি কি? নাহয় কানটা যাবে।

 এই বলেই সে জামা জোড়া পরে, মস্ত পাগড়ি বেঁধে, লম্বা ফোঁটা কেটে, রাজার সভায় গিয়ে লম্বা সেলাম ঠুকে জোড়হাতে বলল, ‘মহারাজের জয় হোক হুকুম হয়ত কিছু গল্প শোনাই।’

 রাজা বললেন ‘ভাল, ভাল, কিন্তু আমার সর্ত জান ত, খুশি করতে পারলে অর্ধেক রাজ্য দিব, না পারলে কানটি কেটে নিব।’

 নাপিত বলল, ‘আমার গল্পের আগাগোড়া শুনতে হবে, মাঝখানে থামতে বলতে পারবেন না।’

 রাজা বললেন, তাই সই, আমিও ত তাই চাই।

 তখন নাপিত চাকর মহলে গিয়ে আচ্ছা করে ছিলিম আট দশ তামাক টেনে এসে খুব গম্ভীর হয়ে বলতে লাগল। —মহারাজ, এখান থেকে অনেক দূরে এক আজব দেশ আছে। অমনি মহারাজ বললেন, ‘তারপর?’

 সেইখানে অনেকদিন আগে ভারি নামজাদা এক রাজা ছিলেন। —‘তারপর?’

 তার রাজ্যের একধার থেকে আরেক ধার যেতে ছ’মাস লাগত। —‘তারপর?’

 আর সে রাজ্যের মাটি যে কি সরেস ছিল, কি বলব?—তারপর? তাতে একসের ধান বুনলে, দশমন ধান পাওয়া যেত—তারপর?