পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

এক নিশ্বাসে ডুব দিয়া তুলিতে পারে তারপর তাহাকে ভাঙ্গিয়া তাহার ভিতরে যে ভ্রমরটি আছে তাহাকে মারিয়া ফেলিতে পারে তবে ঐ গুলি মরিবে। রাক্ষসেরা যত লোককে খাইয়াছে, তাহাদের হাড়গুলি সবই রাখিয়া দিয়াছে। যদি কেহ রাক্ষসগুলিকে মারিয়া তারপর ঐ হাড়গুলিতে এই সোনার কাঠি এবং রূপার কাঠি ধোওয়া জল ছড়াইয়া দিতে পারে, তবে ঐসকল লোক বাঁচিয়া উঠিবে। রাজার ছেলে এই কথা শুনিয়া একদিন রাক্ষসদের অনুপস্থিতিতে এই-সকল কার্য সাধন করিল। রাক্ষসও মারিল, ভাইদেরও বাঁচাইল।

 আরো এক গল্প শুনিয়াছি। রাজার মেয়ে মরিয়া গেল, মুনি-ঠাকুর আসিয়া রাজার নিকট বলিলেন, ‘রাজা, তোমার মেয়েকে আমি বাঁচাইয়া দিতেছি। আমাকে একটা বড় কড়া দাও, একটা টেবিল দাও, একটা ছুরি দাও, আর জল ও আগুন দাও।’ রাজা সকলই দিলেন। মুনিঠাকুর সেই মড়াটাকে কড়াতে সিদ্ধ করিয়া তার মাংসগুলি ফেলিয়া দিলেন। পরে হাড়গুলি পরিষ্কার করিয়া টেবিল রাখিয়া তাহাতে মন্ত্রপূর্বক জল ছড়াইয়া দিলেন, আর অমনি যে মেয়ে ছিল সেই মেয়ে হইয়া উঠিল।

 এ-সব ত গেল গল্প। সত্যি সত্যি মড়া বাঁচাইতে দেখিয়াছ? আমি দেখি নাই কিন্তু শুনিয়াছি। চোরাসান্নিপাত রোগে যাহারা মরে, তাহাদের অনেককে দেশীয় শাস্ত্রীয় কবিরাজেরা বাঁচাইয়াছেন; এরূপ গল্প অনেকের মুখে আমি শুনিয়াছি।

 একখানি ইংরাজি কাগজে নিম্নলিখিত গল্পটি পড়িয়াছি—

 ‘বিলাতের একজন ডাক্তার একটি ছোট কুকুরের গলার শিরা কাটিয়া দিলেন; কুকুরটি দেখিতে দেখিতে রক্ত পড়িয়া মরিয়া গেল। মরিয়া গেলে পর তিন ঘণ্টা কাল একটি ঘরে কুকুরটিকে রাখিয়া দেওয়া হইল। কুকুরটি শক্ত হইয়া গেল। তারপর তাহাকে গরম জলে ফেলিয়া ক্রমাগত মাজিয়া দেওয়া হইল। হাত-পাগুলি অনেক্ষণ নাডিয়া চাড়িয়া দিলে পর শরীরটা যেন বেশ নরম হইল। তারপর সাহেব একটা রাবারের নল দিয়া তাহার পেটে তিন ছটাক রক্ত পুরিয়া দিলেন। একটা কল দিয়া কৃত্রিম নিশ্বাস প্রশ্বাস করান হইতে লাগিল;এবং একটা বড় কুকুরের রক্ত ঐ ছেট কুকুরটির গায়ে প্রবেশ করাইয়া দেওয়া হইল। এই-সকল কার্য একবারে হইতে লাগিল। অর্থাৎ একজন সাহেব নিশ্বাস প্রশ্বাস করাইতে লাগিলেন, একজন রক্ত দিতে লাগিলেন আর-একজন ক্রমাগত তাহার শরীরটা মাজিতে লাগিলেন। ক্রমে কুকুরটির চক্ষু সতেজ হইল, আর কয়েক মুহূর্ত পরে শরীরটা একটু একটু কাঁপিতে লাগিল। তারপর কুকুরটি হাঁপাইতে লাগিল, চক্ষু উজ্জ্বল হইল; শেষে ফিট হইলে যেমন হয়, সেইরূপ করিতে লাগিল। তারপর ক্রমেই শান্ত হইয়া আসিতে লাগিল, একটু একটু কোঁকাইতেও লাগিল। প্রথম রক্ত দেওয়ার কুড়ি মিনিটের মধ্যে কুকুরটি উঠিয়া বসিল। শীঘ্রই দাঁড়াইয়া, তারপর হাঁটিতে লাগিল। দুই দিনের মধ্যে সে রাস্তায় দৌড়িয়া বেড়াইতে লাগিল।

 ‘সাহেবদের গরু বাছুর মারিতে আপত্তি নাই, সুতরাং ডাক্তারমহাশয় একটি বাছুরকেও ঐরূপ করিয়া দেখিলেন। সেও বাঁচিল। আর একটি ছোট কুকুরকে জলে ডুবাইয়া মারিয়া আবার ঐ প্রণালীতে বাঁচাইয়া দিলেন।’

 ‘আমরা ছোট-খাট রকমে একপ্রকার মরা জানোয়ার বাঁচাইয়াছি। সে হয়ত পাঠকগণের মধ্যে সকলেই এক-একবার করিয়া থাকিবেন। মাছিগুলিকে দু-একটা চড় চাপড় মারিলেই