পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪৬৫

তাহারা মরিয়া যাইতে রাজি হয়। একটি মাছিকে ঐরূপ করিয়া তাহাকে সহজেই পুনরায় বাঁচান যাইতে পারে। মাছিটিকে এক হাতে রাখিয়া আর-এক হাত দিয়া তাহার উপর একটি ঘর নির্মাণ করিয়া দেও। ঘরের একটি ছোট দরজা রাখিয়া তাহার মধ্যে দিয়া খুব ফুঁ দিতে থাক। দেখিবে, শীঘ্রই মাছিটি বাঁচিয়া উঠিবে।

 আমাদের দেশের কথা শুনিয়াছি, সর্পাঘাতে মরা লোকগুলিকে তিন দিন চারি দিন পরে ওঝা আসিয়া মন্ত্র পড়িয়া বাঁচাইয়া দিতে পারে। সত্য মিথ্যা শপথ করিতে পারি না।

ভূতের গল্প

 আমি ভূতের গল্প বড় ভালবাসি। তোমরা পাঁচ জনে মিলিয়া ভূতের গল্প কর, সেখানে পাঁচ ঘণ্টা বসিয়া থাকিতে পারি। ইহাতে যে কি মজা; একটা শুনিলে আর-একটা শুনিতে ইচ্ছা করে, দুটা শুনিলে একটা কথা কহিতে ইচ্ছা করে। গল্প শেষ হইয়া গেলে একাকী ঘরের বাহিরে যাইতে ইচ্ছা হয় না। তোমাদের মধ্যে আমার মতন কেহ আছ কি না জানি না, বোধহয় আছে। তাই আজ তোমাদের কাছে একটা গল্প বলিব। গল্পটা একখানি ইংরাজি কাগজে পড়িয়াছি। তোমাদের সুবিধার জন্য ইংরাজি নামগুলি বদল করিয়া দিতে ইচ্ছা ছিল, কিন্তু গল্পটি পড়িলেই বুঝিতে পারিবে যে শুধু নাম বদ্‌লাইলে কাজ চলিবে না। সুতরাং ঠিক যেরূপ পড়িয়াছি প্রায় সেইরূপ অনুবাদ করিয়া দেওয়াই ভাল বোধ হইতেছে।

 ‘স্কট্‌ল্যাণ্ডের ম্যাপ্‌টার দিকে একবার চাহিয়া দেখিলে বাঁ ধারে ছোট-ছোট দ্বীপ দেখিতে পাইবে। তাহার উপরেরটির নাম নর্থ উইষ্ট্‌, নীচেরটির নাম সাউথ্‌ উইষ্ট্‌। এর মাঝামাঝি ছোট-ছোট আর কতকগুলি দ্বীপ দেখা যায়। এ সেকালের কথা, তখন স্টীম্ এঞ্জিনও ছিল না টেলিগ্রাফও ছিল না; আমার ঠাকুরদাদা তখন এর একটি দ্বীপে স্কুলে মাস্টারি করিতেন।

 ‘সেখানে লোক বড় বেশি ছিল না। তাদের কাজের মধ্যে কেবল মাত্র মেষ চরান, আর কষ্টে সৃষ্টে কোন মতে দিন চলার মত কিছু শস্য উৎপাদন করা। সেখানকার মাটি বড় খারাপ; তারি একটু একটু সকলে ভাগ করিয়া নেয় আর জমিদারকে খাজনা দেয়। ... এরা বেশ সাহসী লোক ছিল। আর ঐরকম কষ্টে থাকিয়া এবং সামান্য খাইয়াও বেশ একপ্রকার সুখে স্বচ্ছন্দে কাল কাটাইত।

 ‘এই দ্বীপে এল্যান, ক্যামেরণ্ নামে একজন লোক ছিলেন, তাঁহার বাড়ি গাঁ থেকে প্রায় এক মাইল দূরে। এল্যানের সঙ্গে মাস্টারমহাশয়ের বড় ভাব, তাঁর কাছে তিনি কতরকমের মজার গল্প বলিতেন। হঠাৎ একদিন ক্যামেরণ্ বড় পীড়িত হইলেন, আর কিছুদিন পরে তাঁহার মৃত্যু হইল। তাঁহার কেউ আপনার লোক ছিল না, সুতরাং তাঁহার বিষয় সমস্ত বিক্রি হইয়া গেল। তাঁর বাড়িটা কেহই কিনিতে চাহিল না বলিয়া তাহা অমনি খালি পড়িয়া রহিল।

 এর কয়েক মাস পরে একদিন জ্যোৎস্না রাত্রিতে ডনাল্ড্ ম্যাকলীন বলিয়া একটি রাখাল ঐ বাড়ির পাশ দিয়া যাইতেছিল। হঠাৎ জানালার দিকে তাহার দৃষ্টি পড়িল, আর সে ঘরের ভিতরে এল্যান্ ক্যামেরণের ছায়া দেখিতে পাইল। দেখিয়া ত তার চক্ষু স্থির! সেখানেই সে হাঁ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল; তাহার চুলগুলি খ্যাংরা কাঠির মত সোজা হইয়া উঠিল, ভয়ে

উপেন্দ্র—৫৯