পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪৬৭

 মাস্টারমহাশয় দেখিলেন, অস্বীকার করিলে যশের হানি হয়। তিনি বলিলেন, ‘যাব বইকি? কিন্তু আমি গিয়ে ফিরে এলেও এর চাইতে আর তোমাদের জ্ঞান বাড়িবে না।’

 বরী—'আচ্ছা দেখা যাউক।’

 মাস্টারমহাশয়—'ভাল, ওখানে গিয়ে আমি কি করব?'

 'বরী—'ওখানে গিয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে তিনবার বলবে-—'এল্যান ক্যামেরণ আছ গো।’ কোন জবাব না পাও ফিরে এস আমি আর ভূত মানবো না।’

 মাস্টারমহাশয় হাসিয়া বলিলেন, ‘এটা ঠিক জেনো যে, এল্যান সেখানে থাকলে আমার কথার উত্তর দিবেই। আমাদেব বড় ভাব ছিল।’

 ‘একজন বলিল, ‘তাকে যদি দেখতে পাও তা হলে মুচির কাছে যে ও টাকা পেত সে’ কথাটা তুল না।’ এ কথায় সকলে হাসিয়া ফেলিল, বরী একটু অপ্রস্তুত হইল।

 'এইরূপে হাসি তামাশা চলিতে লাগিল, ক্রমে মাস্টারমহাশয়ের যাওয়ার সময় হইয়া আসিল।'

 শেষে মুচি ঘড়ির দিকে চাহিয়া বলিল, ‘বারটা বাজতে কুড়ি মিনিট বাকি।’

 'তুমি এখন গেলে ভাল হয়, তাহলেই ঠিক ভূতের সময়টাতে পৌঁছতে পারবে।’

 'বেশ করিয়া মানসিকভাবে সহজ হইয়া মাস্টারমহাশয় যষ্টি হস্তে সেই বাড়ির দিকে চলিলেন। মাস্টারমহাশয় যাইবার সময় সকলেই দু’ একটা খোঁচা দিয়া দিল, এবং স্থির করিল, ফলটা কি হয় দেখাই যাইবে।’

 'রাত্রি অনেক হইল। ততক্ষণে চাঁদ দেখা যাইতেছিল। কিন্তু এক্ষণে কাল কাল মেঘ আসিয়া চাঁদকে ঢাকিয়া ফেলিতেছে। মাস্টার চলিয়া গেলে সকলে আরম্ভ করিল যে, সমস্ত রাস্তাটা সাহস করিয়া যাওয়া তাহার পক্ষে সম্ভব কিনা। ছোট পাদরি বলিল যে তিনি হয়ত অর্ধেক পথ গিয়াই ফিরিয়া আসিয়া যাহা ইচ্ছা বলিবেন, তখন আর কাহারো কিছু বলিবার থাকিবে না। ইহা শুনিয়া মুচির মনে ভয় হইল জুতাজোড়া যদি নেহাত ফাঁকি দিয়া নেয়, এটা তাহার ভাল লাগিবে না। তখন সকলে প্রস্তাব করিল যে বরী যাইয়া দেখিয়া আসুক।’

 'প্রথমে বরী ইহাতে আপত্তি করিল। কিন্তু উহাকে বুঝাইবার পরে রাজি হইল। সকলে তাহাকে সাবধান করিয়া দিল যেন মাস্টার তাহাকে দেখিতে না পায়, তারপর সে বাহির হইল। খুব চলিতে পারিত এই গুণে শীঘ্রই সে মাস্টারকে দেখিতে পাইল। বরী একটু দূরে দূরে থাকিতে লাগিল—রাস্তাটা একটা জলা জায়গার মধ্য দিয়া একটি গাছপালা নাই যে মাস্টার ফিরিয়া চাহিলে তাহার আড়ালে থাকিয়া বাঁচিবে।'

 ‘পরে মাস্টারমহাশয় যখন ঐ বাড়িতে পৌঁছিলেন তখন বরী একটু বুদ্ধি খাটাইয়া খানিকটা ঘুরিয়া বাড়ির সমুখে আসিল। সেখানে একটা নিচু বেড়া ছিল, তাহার আড়ালে শুইয়া পড়িল।'

 ‘সে অবস্থায় দূতের কার্য করিতে যাইয়া তাহার অন্তরটা গুর গুর করিতে লাগিল। মাস্টারমহাশয় ছিলেন বলিয়া, নহিলে সে এতক্ষণ চেঁচাইয়া ফেলিত। কষ্টেসৃষ্টে কোন মতে প্রাণটা হাতে করিয়া দেখিতেছে কি হয়। মনে করিয়াছে মাস্টারমহাশয় যেরূপ ব্যবহার করেন তাহা দেখা হইয়া গেলেই সে বাহির হইবে।'

 ‘গ্রামের গির্জার ঘড়িতে বারটা বাজিল। সে বেড়ার ছিদ্র দিয়া চাহিয়া দেখিল যে