পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

মাস্টারমহাশয় নির্ভয়ে দরজার সম্মুখে আসিয়া দাঁড়াইয়াছেন।

 ‘মাস্টারমহাশয় গলা পরিষ্কার করিলেন এবং একটু শুষ্ক স্বরে বলিলেন—

 ‘এল্যান্ ক্যামেরণ আছে গো!’ —কোন উত্তর নাই।

 ‘দু-এক পা পশ্চাৎ সরিয়া একটু আস্তে আবার বলিলেন, ‘এল্যান্ ক্যামেরণ্ আছ গো!’— কোন উত্তর নাই।

 ‘তারপর বাড়িতে আসিবার রাস্তাটির মাথা পর্যন্ত হাঁটিয়া গিয়া থতমত স্বরে অর্ধ চিৎকার অর্ধ আহ্বানের মত করিয়া তৃতীয়বার বলিলেন, ‘এল-ক্যামেরণ—আছ—।’ তারপর আর উত্তরের অপেক্ষা নাই। —সটান চম্পট।

 ‘কি সর্বনাশ! কোথায় মাস্টারের সঙ্গে বাড়ি যাইবে, মাস্টার যে এ কি করিয়া ফেলিলেন। মুচি বেচারীর আর আতঙ্কের সীমা নাই। তবে বুঝি ভূত এল। আর থাকিতে পারিল না। এই সময়ে তার মনে যে ভয় হইয়াছিল, তারই উপযুক্ত ভয়ানক গোঁ গোঁ শব্দ করিতে করিতে সে মাস্টারমহাশয়ের পেছনে ছুটিতে লাগিল।

 ‘সেই ভয়ানক চিৎকার শব্দ মাস্টারমহাশয়ের কানে গেল। মুচি দৌড়িতেছে আর ডাকিতেছে ‘দাঁড়াও গো মাস্টারমশাই! দাঁড়াও!’ মাস্টারমহাশয় শুনিতে পাইলেন। পশ্চাতে একপ্রকার শব্দও শুনিতে পাইলেন। আর কি? ঐ এল্যান্ ক্যামেরণ! ভয়ে আরো দশ গুণ দৌড়িতে লাগিলেন। ররী বেচারা দেখিল বড় বিপদ! ফেলিয়াই বুঝি গেল। কি করে তারও প্রাণপণ চেষ্টা। মাস্টারমহাশয় দেখিলেন পাছেরটা আসিয়া ধরিয়াই ফেলিল। তাঁহার গায়ের বল চলিয়া যাইতে লাগিল।

 ‘অবশেষে মাস্টারমহাশয় যখন দেখিলেন যে আর রক্ষা নাই, তখন তিনি সাহসে ভর করিলেন, এবং খুব শক্ত করে লাঠি ধরিয়া সেই কল্পিত ভূতের দিকে ফিরিলেন এবং আর মুহূর্তকাল বিলম্ব না করিয়া যত জোর ছিল একবার সেই কল্পিত ভূতের মস্তকে সপাট— সাংঘাতিক এক ঘা। তারপর সেটাও যেন কোথায় অন্ধকারে অদৃশ্য হইল।

 ‘ভূতটা যাওয়াতে এখন একটু সাহস আসিল, কিন্তু তথাপি যতক্ষণ গ্রামের আলোক না দেখা গেল ততক্ষণ থামিলেন না। গ্রামের প্রবেশ করিবার পূর্বে সাবধানে ঘাম মুছিয়া ঠাণ্ডা হইয়া লইলেন। মনটা যখন নির্ভয় হইল তখন ঘরে গেলেন—যেন বিশেষ একটা কিছু হয় নাই। অনেক কথা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করা হইল, তিনি সকলগুলিরই উত্তরে বলিলেন

 ‘ঐ আমি যা বলেছিলাম; ভূতটুত কিছুই ত দেখতে পেলাম না!’

 এরপর মুচির জন্য সকলে অপেক্ষা করিতে লাগিল। মাস্টারকে তাহারা বলিল যে, সে স্থানান্তরে গিয়াছে, শীঘ্রই ফিরিয়া আসিবে।

 ‘আধঘণ্টা হইয়া গেল তবু মুচি আসে না। সকলে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করিতে লাগিল। চিন্তা বাড়িতে লাগিল, ক্রমে একটা বাজিল! তারপর আর থাকিতে পারিল না, মুচির অনুপস্থিতির কারণ তাহারা মাস্টারমহাশয়কে বলিয়া ফেলিল, মাস্টারমহাশয় শুনিয়াই চিৎকার করিয়া উঠিলেন। লাফাইয়া উঠিয়া লণ্ঠন হাতে করিয়া দৌড়িয়া বাহির হইলেন এবং সকলকে পশ্চাৎ আসিতে বলিয়া দৌড়িয়া চলিলেন।

 ‘সকলেরই বিশ্বাস হইল মাস্টারমহাশয়ের বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পাইয়াছে। হৈ চৈ কাণ্ড! সকলেই জিজ্ঞাসা করে ব্যাপারটা কি? তাড়াতাড়ি ঘরের বাহিরে আসিয়া তাহারা মাস্টারকে