পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৭২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

আর এখন সিংহকে ডরায়? তার বর্শার এক খোঁচা খেয়েই সিংহ জিব বার করে, চোখ উলটিয়ে মরে গেল।

 সেই সিংহটাকে কাঁধে ফেলে, ঢাল আর বর্শা হাতে যখন কামা গ্রামে এসে উপস্থিত হয়েছে তখন ত তাকে দেখে আর কারুর মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। গ্রামের জোয়ানেরা এসে তার ঢাল আর বর্শা আর সিংহটাকে নিয়ে কত টানাটানি করল, কিন্তু কেউ তাকে একটু নাড়াতে পারল না।

 গ্রামের সর্দার আগে কামাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল, এখন সে তাকে কি করে আদর দেখাবে, তাই ভেবে ঠিক করতে পারছে না। তখনি সে তাকে একখানি ঘর আর অনেকগুলি ষাঁড় দিয়ে দিল।

 এখন আর কামার কোন দুঃখ নাই। সে সেই ঘরখানিতে তার মাকে নিয়ে থাকে। আগে যারা তাকে বলত ‘ভীতু কামা’—এখন তারা বলে ‘কামা পালোয়ান।’

চিল মা

 এক যে ছিল বড় ঘরেব ছোট বৌ, ‘তার ছিল টুকটুকে একটি খুকী। বৌটি বসে কুটনো কুটছে, খুকীটি হামা দিয়ে ছাতে চলে গেছে। সেইখানে ছিল এক চিল বসে, সে যে খুকীটিকে দেখতে পেয়েই ছোঁ মেরে নিয়ে গেছে, বৌ তাব কিছু, জানে না।

 খুকীটিকে নিয়ে চিল একেবাবে ঘন বনেব ভিতরে তাঁর বাসায় চলে গেল। সেইখানে খুকী থাকে, চিলের সঙ্গে খেলা করে, তার পাখায় মুখ লুকিয়ে হাসে, চিল দেশ বিদেশে ঘুরে তার জন্য খাবার নিয়ে আসে, ঝড়বাদলে তাকে ডান দিয়ে ঢেকে নিয়ে বসে থাকে।

 দিন যাচ্ছে খুকীও বড় হচ্ছে, আর দেখতে হয়েছে যেন দেবতাব মেয়ে। চিল তাকে কোথেকে একটা চরকা এনে দিয়েছে, তাই নিয়ে সে দিনবাত খেলা কবে।

 এর মধ্যে একদিন হয়েছে কি, সেই দেশের যে বাজা, তিনি বনে এসেছে শিকার করতে। সঙ্গে কত লোকজন এসেছে তারা ঝোপে ঝোপে উঁকি মেরে হরিণ খুঁজে বেড়াচ্ছে। খুঁজতে খুঁজতে তারা সেই চিলের বাসার কাছে এসে বলল—ভালরে ভাল, চিলের বাসায় চরকার শব্দ হচ্ছে কিকরে হচ্ছে? বলে তারা যেই গাছে উঠে দেখতে যাবে, অমনি চিল কোথেকে উড়ে এসে নখ আর ঠোঁট দিয়ে তাদের নাক মুঁখ ছিড়ে দিতে লাগল। তখন তারা ঢিপঢাপ গাছ থেকে পড়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে রাজার কাছে এসে বলল— রাজামশাই, এমন ত কখন শুনিনি! চিলের বাসায় কে বসে চরকা কাটছে! আমরা দেখতে গিয়েছিলুম, তাতেই দেখুন আমাদের কি দশা হয়েছে!

 একথা শুনে রাজা নিজেই সেই গাছের তলায় এলেন। তাঁকে দেখেই চিল সেই গাছ থেকে উড়ে চলে গেল। তিনি গাছে উঠে দেখলেন পরীর মত সুন্দর একটি মেয়ে চিলের বাসায় বসে আছে।

 রাজামহাশয়ের শিকার করা হল না। তিনি যারপর নাই আদর করে সেই মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে এলেন। তারপর পুরুত ডেকে, বাজনা বাজিয়ে, হাসি গান আর আলোর মধ্যে