দিয়ে তাঁর সঙ্গে মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেল। সবাই বলল—কি সুন্দর রাণী! কি সুন্দর রাণী।
রাজার আরো ছয়টি রাণী ছিল। নূতন রাণীকে দেখে তাদের ত ভারি হিংসে হয়েছে। তারা তার বাপের নাম জিজ্ঞাসা করে, বাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করে, বেচারা তার কিছুই বলতে পারে না। তখন তারা রাজাকে বলল—কোথাকার কোন ছোট লোকের মেয়ে বিয়ে করে এনেছ, বাপের নাম বলতে পারে না!
রাজা বললেন—কি করে বলবে? জন্মে অবধি চিলের কাছে ছিল, বাপ-মায়ের মুখ দেখতে পায় নি। ওর মুখের দিকে চেয়ে দেখ দেখি, কাকে ছোটলোকের মেয়ের মতন দেখায়!
তখন রাণীরা ত হিংসায় যেন মরেই যেতে লাগল। তারা দিনরাত ভাবে, কি করে ছোটরাণীকে জব্দ করবে!
এর মধ্যে একদিন রাজা রাণীদের বললেন, তোমরা নিজের নিজের ঘর বেশ করে সাজাও ত, দেখি কার কেমন পছন্দ।
একথা শুনে বড় রাণীরা ভাবল—বেশ হয়েছে! ও ছোটলেকের মেয়ে, ভাল করে ঘর সাজাতে পারবে না। আর রাজার কাছে বোকা বনে যাবে!
তারা সবাই মিলে যুক্তি করে রাজার কাছ থেকে দামী দামী ঝাড় লণ্ঠন, পর্দা, ঝালর, গালিচা এনে নিজের নিজের ঘর সাজাল।
ছোটরাণী বেচারা কি করবে? সে মনের দুঃখে বাগানে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল—
এক গাছে টান দিতে বেত গাছ নড়ে,
চিল মা, চিলমা, আয় মা উড়ে!
বলতে বলতেই সেই চিল উঠে এসে বলল— কি হয়েছে মা? কেন ডেকেছ?
ছোটরাণী বলল— রাজা বলেছে ঘর সাজাতে, বড়রাণীরা তাদের ঘর কি চমৎকার করে সাজিয়েছে। আমি ত মা কিছু জানি না, কি করে আমাব ঘর সাজাব?
চিল বলল—এই কথা? আচ্ছা মা, তোমার কোন ভাবনা নেই। একটু বস, আমি এক্ষুণি আসছি। বলে চিল কোথেকে একটা গাছের ডাল নিয়ে এসে বলল—এই ডালের পাতাগুলি ঘরের দেওয়ালে, ছাতে, দরজায়, মেঝেতে আর সব জিনিসপত্রে নিয়ে ঘসে দাও, আর কিছু করতে হবে না।
এই কথা বলে চিল চলে গেল, আর ছোটরাণী তার ঘরে এসে সকল জায়গায় আর জিনিসপত্রে সেই ডালের পাতা ঘসে দিল। দিতেই দেখে যে সেই ঘরের যা কিছু দরজা-জানলা, কড়ি, বরগা অবধি সব সোনার হয়ে গেছে। খাট সোনার, লেপ তোষক বালিস মশারি অবধি সব সোনার!
রাজা ত অন্য রাণীদের ঘর দেখে ভারি খুশি হয়ে এসেছে, আর ভাবছে-ছোটরাণী হয়ত কিছুই করতে পারেনি।
ছোটরাণীর ঘরে ঢুকে কিন্তু তার মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না—এমন সুন্দর ঘর কি আর কখনো দেখেছে? বড় রাণীদের তখনি ডেকে এনে রাজা বললেন-দেখ ত কে ছোটলোকের মেয়ে! ছোটলোকের মেয়ের কাজ বুঝি এমনি হয়?
রাণীরা আর কি বলবেন? বলার কিছু থাকলে ত!